পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

宁国@顶 9. সম্বন্ধে মনে মনে বিতর্ক করেও অপঘাত-মৃত্যু বাঁচিয়ে চলা যায়। কিন্তু, সেদিন খামক একটা প্রচণ্ড “হেইয়ো” গর্জন শুনে পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা খোলা বুহাম গাড়ির প্রকাণ্ড একজোড়া লাল ঘোড়া আমার পিঠের উপর পড়ে আর-কি ! যার গাড়ি তিনি স্বয়ং হাকাচ্ছেন, পাশে তার কোচম্যান বসে । বাবু সাবলে দুই হাতে রাশ টেনে ধরেছেন। আমি কোনোমতে সেই সংকীর্ণ গলির পার্শ্ববর্তী একটা তামাকের দোকানের হাটু আঁকড়ে ধরে আত্মরক্ষা করলুম। দেখলুম। আমার উপর বাবু ক্রুদ্ধ । কেননা, যিনি অসতর্কভাবে রথ। ইকান অসতর্ক পদাতিককে তিনি কোনোমতেই ক্ষমা করতে পারেন না। এর কারণটা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। পদাতিকের দুটি মাত্র পা, সে হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষ । আর, যে-ব্যক্তি জুড়ি হাকিয়ে ছোটে তার আট পা ; সে হল দৈত্য । তার এই অস্বাভাবিক বাহুল্যের দ্বারা জগতে সে উৎপাতের সৃষ্টি করে। দুই-পা-ওয়ালা মানুষের বিধাতা এই আট-পা-ওয়ালা আকস্মিকটার জন্যে প্ৰস্তুত ছিলেন না । স্বভাবের স্বাস্থ্যকর নিয়মে এই অশ্বরথ ও সারথি সবাইকেই যথাসময়ে ভুলে যে তুম । কারণ, এই পরমাশ্চর্য জগতে এরা বিশেষ করে। মনে রাখবার জিনিস নয় । কিন্তু, প্ৰত্যেক মানুষের যে পরিমাণ গোলমাল করবার স্বাভাবিক বরাদ আছে, ঐরা তার চেয়ে ঢের বেশি জবর দখল করে বসে আছেন । এইজন্যে যদিচ ইচ্ছা করলেই আমার তিন নম্বর প্রতিবেশীকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু আমার এই পয়লা-নম্বরের প্রতিবেশীকে এক মুহুর্ত আমার ভুলে থাকা শক্ত । রাত্রে তার আট-দশটা ঘোড়া আস্তাবলের কাঠের মেঝের উপর বিনা সংগীতের যে-তাল দিতে থাকে তাতে আমার ঘুম সর্বাঙ্গে টােল খেয়ে তুবড়ে যায়। তার উপর ভোরবেলায় সেই আট-দশটা ঘোড়াকে আট-দশটা সহিস যখন সশব্দে মলতে থাকে তখন সৌজন্য রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাড়ায় । তার পরে তার উড়ে বেহারা, ভোজপুরি বেহারা, তার পাড়ে তেওয়ারি দরোয়ানের দল কেউই স্বরসংযম কিংবা মিতভাষিতার পক্ষপাতী নয়। তাই বলছিলুম, ব্যক্তিটি একটিমাত্র কিন্তু তার গোলমাল করবার যন্ত্র বিস্তর । এইটেই হচ্ছে দৈত্যের লক্ষণ । সেটা তার নিজের পক্ষে অশান্তিকর না হতে পারে । নিজের কুড়িটা নাসারান্ধে নাক ডাকবার সময় রাবণের হয়তো ঘুমের ব্যাঘাত হত না, কিন্তু তার প্রতিবেশীর কথাটা চিন্তা করে দেখো । স্বর্গের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে পরিমাণসুষমা, অপর পক্ষে একদা যে-দানবের দ্বারা স্বগের নন্দনশোভা নষ্ট হয়েছিল তাদের প্রধান লক্ষণ ছিল অপরিমিতি । আজ সেই অপরিমিতি দানবটাই টাকার থলিকে বাহন করে মানবের লোকালয়কে আক্রমণ করেছে । তাকে যদি-বা পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে যেতে চাই সে চার ঘোড়া হাকিয়ে ঘাড়ের উপর এসে পড়ে-- এবং উপরন্তু চোখ রাঙায় । সেদিন বিকেলে আমার দ্বৈতগুলি তখনো কেউ আসে নি । আমি বসে বসে জোয়ার-ভাটার তত্ত্ব সম্বন্ধে একখানা বই পড়ছিলুম, এমন সময়ে আমাদের বাড়ির প্রাচীর ডিঙিয়ে, দরজা পেরিয়ে আমার প্রতিবেশীর একটা স্মারকলিপি ঝন ঝন শব্দে আমার শার্সির উপর এসে পড়ল। সেটা একটা টেনিসের গোলা । চন্দ্ৰমার আকর্ষণ, পৃথিবীর নাড়ীর চাঞ্চল্য, বিশ্বগীতিকাব্যের চিরন্তন ছন্দতত্ত্ব প্রভৃতি সমস্তকে ছাড়িয়ে মনে পড়ল, আমার একজন প্রতিবেশী আছেন, এবং অত্যন্ত বেশি করে আছেন, আমার পক্ষে তিনি সম্পূর্ণ অনাবশ্যক অথচ নিরতিশয় অবশ্যম্ভাবী। পরীক্ষণেই দেখি, আমার বুড়ো অযোধ্যা বেহারাটা দৌড়তে দৌড়তে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে উপস্থিত। এই আমার একমাত্র অনুচর। একে ডেকে পাই নে, হেঁকে বিচলিত করতে পারি নে- দুর্লভতর কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে, একা মানুষ কিন্তু কাজ বিস্তর। আজ দেখি, বিনা তাগিদেই গোলা কুড়িয়ে সে পাশের বাড়ির দিকে ছুটছে। খবর পেলুম, প্রত্যেকবার গোলা কুড়িয়ে দেবার জন্যে সে চার পয়সা করে মজুরি পায় । দেখলুম, কেবল যে আমার শার্সি ভাঙছে, আমার শান্তি ভাঙছে, তা নয়, আমার অনুচর-পরিচরদের মন ভাঙতে লাগল। আমার অকিঞ্চিৎকরতা সম্বন্ধে অযোধ্যা বেহারিার অবজ্ঞা প্ৰত্যহ বেড়ে উঠছে, সেটা তেমন আশ্চর্য নয়। কিন্তু আমার দ্বৈতসম্প্রদায়ের প্রধান সর্দার কানাইলালের মনটাও দেখছি পাশের বাড়ির প্রতি উৎসুক হয়ে উঠল। আমার উপর তার যে নিষ্ঠা ছিল সেটা উপকরণমূলক নয়, Nà NR SRG?