পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o NR রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তার পায়ে কোনোরকম বিকার হয় নি। কেমন করে জানায় যে, এমনতরো টেপাটেপি করে কেবলমাত্র তাকে অপদস্থ করা হচ্ছে। মনে মনে বুঝলেম, রোগশয্যায় রোগীর আর স্থান হবে না । এর চেয়ে ভালো নববঙ্গের ভাইফোঁটা-সমিতির সভাপতি হওয়া । পাখার হাওয়া আন্তে আস্তে থেমে গেল । হরিমতি স্পষ্ট অনুভব করলে, অস্ত্রটা তারই উদ্দেশে । এ হচ্ছে প্ৰসন্নকে দিয়ে হরিমতিকে উৎখাত করা । কণ্টকেনৈব কণ্টকম। একটু পরে পাখাটা মাটিতে রেখে সে উঠে দাঁড়াল। আমার পায়ের কাছে মাথা ঠেকিয়ে প্ৰণাম করে আস্তে আস্তে দুই পায়ে হাত বুলিয়ে চলে গেল । আবার আমাকে গীতা খুলতে হল । তবুও শ্লোকের ফঁাকে ফঁাকে দরজার ফাকের দিকে চেয়ে দেখি- কিন্তু সেই একটুখানি ছায়া আর-কোথাও দেখা গেল না। তার বদলে প্ৰসন্ন প্রায়ই আসে, জড়ো হল । অমিয়া এমনু, ব্যবস্থা করে দিলে, যাতে পালা করে আমার নিত্যসেবা চলে । এ দিকে শোনা গেল, হরিমতি একদিন কাউকে কিছু না বলে কলকাতা ছেড়ে তার পাড়াগায়ের বাড়িতে চলে গেছে । মাসের বারোই তারিখে সম্পাদক-বন্ধু এসে বললেন- “একি ব্যাপার । ঠাট্টা নাকি । এই কি তোমার কঠোর অভিজ্ঞতা ।” আমি হেসে বললেম, “পুজোর বাজারে চলবে না কি ৷” “একেবারেই না । এটা তো অত্যন্তই হালকা-রকমের জিনিস ।” সম্পাদকের দোষ নেই । জেলবাসের পর থেকে আমার অশ্রািজল অন্তঃশীলা বইছে । লোকে বাইরে থেকে আমাকে খুব হালকা-প্রকৃতির লোক মনে করে । গল্পটা আমাকে ফেরত দিয়ে গেল। ঠিক সেই মুহুর্তে এল অনিল । বললে, “মুখে বলতে পারব না, এই চিঠিটা পড়ন ।” ፬፡ চিঠিতে অমিয়াকে, তার দেবীকে, যুগলক্ষ্মীকে বিবাহ করবার ইচ্ছে জানিয়েছে ; এ কথাও বলেছে, অমিয়ার অসম্মতি নেই । তখন অমিয়ার জন্মবৃত্তান্ত তাকে বলতে হল । সহজে বলতেমনা ; কিন্তু জানতেম, হীনবর্ণের পরে অনিল শ্রদ্ধাপূর্ণ করুণা প্রকাশ করে থাকে। আমি তাকে বললেম,“পূর্বপুরুষের কলঙ্ক জন্মের দ্বারাই স্বলিত হয়ে যায়, এ তো তোমরা অমিয়ার জীবনেই স্পষ্ট দেখতে পােচ্ছ । সে পদ্ম, তাতে পঙ্কের চিহ্ন নেই ।” নববঙ্গে ভাইফোটার সভা তার পরে আর জমল না । ফোটা রয়েছে তৈরি, কপাল মেরেছে দৌড় । আর শুনেছি, অনিল কলকাতা ছেড়ে কুমিল্লায় স্বরাজপ্রচারের কী-একটা কাজ নিয়েছে। অমিয়া কলেজে ভরতি হবার উদ্যোগে আছে । ইতিমধ্যে পিসিমা তীৰ্থ থেকে ফিরে আসার পর শুশ্রুষার সাত-পাক বেড়ি থেকে আমার পা দুটাে খালাস পেয়েছে। অগ্রহায়ণ ১৩৩২ সংস্কার চিত্রগুপ্ত এমন অনেক পাপের হিসাব বড়ো অক্ষরে তার খাতায় জমা করেন যা থাকে পাপীর নিজের অগোচরে । তেমনি এমন পাপও ঘটে যাকে আমিই চিনি পাপ বলে, আর-কেউ না । যেটার কথা লিখতে বসেছি সেটা সেই জাতের । চিত্রগুপ্তের কাছে জবাবদিহি করবার পূর্বে আগে-ভাগে কবুল করলে অপরাধের মাত্ৰাট হালকা হবে ।