পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8wo রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কবির কৈফিয়ত আমরা যে-ব্যাপারটাকে বলি জীবলীলা পশ্চিমসমুদ্রের ওপারে তাকেই বলে জীবনসংগ্ৰাম । ইহাতে ক্ষতি ছিল না। একটা জিনিসকে আমি যদি বলি নীেকা-চালানো আর তুমি যদি বল দাড়ি-টানা, একটি কাব্যকে আমি যদি বলি রামায়ণ আর তুমি যদি বলরাম-রাবণের লড়াই, তাহা লইয়া আদালত করিবার দরকার ছিল না । কিন্তু, মুশকিল হইয়াছে এই যে, কথাটা ব্যবহার করিতে আমাদের আজকাল লিজা বোধ হইতেছে। জীবনটা কেবলই লীলা ! এ কথা শুনিলে জগতের সমস্ত পালোয়ানের দলেরা কী বলিবে যাহারা তিন ভুবনে কেবলই তাল ঠুকিয়া লড়াই করিয়া বেড়াইতেছে ! আমি কবুল করিতেছি, আমার এখানে লজ্জা নাই। ইহাতে আমার ইংরেজিমাস্টার তার সব চেয়ে বড়ো শব্দভেদী বাণটা আমাকে মারিতে পারেন- বলিতে পারেন, “ওহে, তুমি নেহাত ওরিয়েন্টাল ।” কিন্তু, তাহাতে আমি মারা পড়িব না । ‘লীলা বলিলে সবটাই বলা হইল, আর লড়াই বলিলে লেজামুড়া বাদ পড়ে। এ লড়াইয়ের আগাই বা কোথায় আর গোড়াই বা কোথায় । ভাঙখোর বিধাতার ভাঙের প্রসাদ টানিয়া এ কি হঠাৎ আমাদের একটা মত্ততা । কেন রে বাপু, কিসের জন্যে খামকা লড়াই । বাচিবার জন্য । আমার না-হক বাচিবার দরকার কী । না বাচিলে যে মরিবে । নাহয় মরিলাম । भक्डि (श bोंG नां | (कन फ़ा नां | 5ों९3 नां दक्लेिशा 59 नां । এই জবাবটাকে এক কথায় বলিতে গেলে বলিতে হয়, লীলা । জীবনের মধ্যে বাচিবার একটা অহেতুক ইচ্ছা আছে। সেই ইচ্ছাটাই চরম কথা । সেইটে আছে বলিয়াই আমরা লড়াই করি, দুঃখকে মানিয়া লই । সমস্ত জোর-জবরদস্তির সব শেষে একটা খুশি আছে- তার ওদিকে আর যাইবার জো নাই, দরকারও নাই । শতরঞ্চ খেলার আগাগোড়াই খেলা- মাঝখানে দাবাবড়ে চালাচালি এবং মহাভাবনা । সেই দুঃখ না থাকিলে খেলার কোনো অর্থই থাকে, না । অপর পক্ষে খেলার আনন্দ না থাকিলে দুঃখের মতো এমন নিদারুণ নিরর্থকতা আর-কিছু নাই। এমন স্থলে শতরঞ্চিকে আমি যদি বলি খেলা আর তুমি যদি বল দাবাবড়ের লড়াই, তবে তুমি আমার চেয়ে কম বৈ যে বেশি বলিলে এমন কথা আমি মানিব না । কিন্তু, এ-সব কথা বলা কেন । জীবনটা কিংবা জগৎটা যে লীলা, এ কথা শুনিতে পাইলেই যে মানুষ একদম কাজকর্মে ঢিল দিয়া বসিবে । এই কথাটা শোনা না-শোনার উপরই যদি মানুষের কাজ করা না-করা নির্ভর করিত তবে যিনি বিশ্ব সৃষ্টি করিয়াছেন গোড়ায় তারই মুখ বন্ধ করিয়া দিতে হয়। সামান্য কবির উপরে রাগ করায় বাহাদুরি न्माष्ट्र । M কেন, সৃষ্টিকর্তা বলেন কী । তিনি আর যাই বলুন, লড়াইয়ের কথাটা যত পারেন চাপা দেন। মানুষের বিজ্ঞান বলিতেছে, জগৎ জুড়িয়া অণুতে পরমাণুতে লড়াই। কিন্তু, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে তাকাইয়া দেখি, সেই যুদ্ধ-ব্যাপার ফুল হইয়া ফোটে, তারা হইয়া জ্বলে, নদী হইয়া চলে, মেঘ হইয়া ওড়ে । সমস্তটার দিকে সমগ্রভাবে যখন দেখি তখন দেখি, ভুমার ক্ষেত্রে সুরের সঙ্গে সুরের মিল, রেখার সঙ্গে রেখার যোগ, রঙের সঙ্গে রঙের মালাবাদল । বিজ্ঞান সেই সমগ্ৰ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দলাদলি ঠেলা ঠেলি হানাহানি দেখিতে