পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8VD SR ब्रोझ-झष्नांबळेी অসহ্য নয়, তবু কাজের লোকদিগকে যতটুকু খুশি করিতে পারা যায় চেষ্টা করা ভালো । যদিচ আমি কবি মাত্র, তবুও এ সম্বন্ধে আমার বুদ্ধিতে যা আসে তা একটু গোড়ার দিক হইতে বলিতে চাই । জগতে সৎচিৎ ও আনন্দের প্রকাশকে আমরা জ্ঞানের ল্যাবরেটরিতে বিশ্লিষ্ট করিয়া দেখিতে পারি, কিন্তু তাহারা বিচ্ছিন্ন হইয়া নাই । কাষ্ঠবস্তু গাছ নয়, তার রস টানিবার ও প্ৰাণ ধরিবার শক্তিও গাছ নয় ; বস্তু ও শক্তিকে একটি সমগ্রতার মধ্যে আবৃত করিয়া যে একটি অখণ্ড প্রকাশ তাহাই গাছতাহা একই কালে বস্তুময়, শক্তিময়, সৌন্দর্যময় । গাছ আমাদিগকে যে আনন্দ দেয় সে এইজন্যই । এইজন্যই গাছ বিশ্বপূথিবীর ঐশ্বর্য। গাছের মধ্যে ছুটির সঙ্গে কাজের, কাজের সঙ্গে খেলার কোনো বিচ্ছেদ নাই। এইজন্যই গাছপালার মধ্যে চিত্ত এমন বিরাম পায়, ছুটির সত্য রূপটি দেখিতে পায় । সে রূপ কাজের বিরুদ্ধ রূপ নয় । বস্তুত তাহা কাজেরই সম্পূর্ণ রূপ। এই কাজের সম্পূর্ণ রূপটিই আনন্দরাপ, সৌন্দর্যরূপ । তাহা কাজ বটে কিন্তু তাহা লীলা, কারণ তাহার কাজ ও বিশ্রাম একসঙ্গেই আছে । সৃষ্টির সমগ্রতার ধারাটা মানুষের মধ্যে আসিয়া ভাঙিয়া-চুরিয়া গেছে। তার প্রধান কারণ, মানুষের নিজের একটা ইচ্ছা আছে, জগতের লীলার সঙ্গে সে সমান তালে চলে না । বিশ্বের তালটা সে আজও সম্পূৰ্ণকায়দা করিতে পারিল না। কথায় কথায় তাল কাটিয়া যায়। এইজন্য নিজের সৃষ্টিকে সেটুকরা টুকরা করিয়া ছোটাে ছোটাে গণ্ডির মধ্যে তাহাকে কোনো প্রকারে তালে বাধিয়া লইতে চায় । কিন্তু, তাহাতে পুরা সংগীতের রস ভাঙিয়া যায় এবং সেই টুকরাগুলার মধ্যেও তালরক্ষা হয় না । ইহাতে মানুষের প্রায় সকল কাজেই যোঝাযুঝিাঁটাই সব চেয়ে প্রকাশ পাইতে থাকে । একটা দৃষ্টান্ত, ছেলেদের শিক্ষা । মানবসন্তানের পক্ষে এমন নিদারুণ দুঃখ আর কিছুই নাই। পাখি উড়িতে শেখে, মা-বাপের গান শুনিয়া গান অভ্যাস করে, সেটা তার জীবলীলার অঙ্গ- বিদ্যার সঙ্গে প্ৰাণের ও মনের প্রাণান্তিক লড়াই নয় । সে-শিক্ষা আগাগোড়াই ছুটির দিনের শিক্ষা, তাহার খেলার বেশে কাজ । গুরুমশায় এবং পাঠশালা কী জিনিস ছিল একবার ভাবিয়া দেখো । মানুষের ঘরে শিশু হইয়া জন্মানো যেন এমন অপরাধ যে, বিশ বছর ধরিয়া তার শান্তি পাইতে হইবে । এ সম্বন্ধে কোনো তর্ক না করিয়া আমি কেবলমাত্র কবিত্বের জোরেই বলিব, এটা বিষম গলদ । কেননা, সৃষ্টিকর্তার মহলে বিশ্বকর্মর দলবল জগৎ জুড়িয়া গান গাহিতেছে মোদের, যেমন খেলা তেমনি যে কাজ জানিস নে কি, ভাই । একদিন নীতিবিৎরা বলিয়াছিল, লালনে বহবো দোষাস্তাড়নে বহবো গুণাঃ । বেত বঁাচাইলে ছেলে মাটি করা হয়, এ কথা সুপ্ৰসিদ্ধ ছিল। অথচ আজ দেখিতেছি, শিক্ষার মধ্যে বিশ্বের আনন্দসুর ক্রমে লাগিতেছে- সেখানে বঁাশের জায়গা ক্রমেই বাশি দখল করিলা । আর একটা দৃষ্টান্ত দেখাই । বিলাত হইতে জাহাজে করিয়া যখন দেশে ফিরিতেছিলাম দুইজন মিশনারি আমার পাছু ধরিয়াছিল। তাহাদের মুখ হইতে আমার দেশের নিন্দায় সমুদ্রের হাওয়া পর্যন্ত দৃষিয়া উঠিল। কিন্তু, তাহারা নিজের স্বাৰ্থ ভুলিয়া আমার দেশের লোকের যে কত অবিশ্রাম উপকার করিতেছে তাহার লম্বা ফৰ্দ আমার কাছে দাখিল করিত। তাহাদের ফর্দটি জাল ফর্দ নয়, অঙ্কেও ভুল নাই। তাহারা সত্যই আমাদের উপকার করে, কিন্তু সেটার মতো নিষ্ঠুর অন্যায় আমাদের প্রতি আর কিছুই হইতে পারে না। তার চেয়ে আমাদের পাড়ায় গুর্থফৌজ লাগাইয়া দেওয়াই ভালো। আমি এই কথা বলি, কর্তব্যনীতি যেখানে কর্তব্যের মধ্যেই বন্ধ, অর্থাৎ যেখানে তাহা অ্যাবস্ট্র্যাকশন, সেখানে সজীব প্রাণীর প্রতি তাহার প্রয়োগ অপরাধ। এইজন্যই আমাদের শাস্ত্ৰে বলে, শ্রদ্ধয়া দেয়ম। কেননা, দানের সঙ্গে শ্রদ্ধা বা প্ৰেম মিলিলে তবেই তাহা সুন্দর ও সমগ্ৰ হয়। কিন্তু, এমনি আমাদের অভ্যাস কদৰ্য হইয়াছে যে, আমরা নির্লজের মতো বলিতে পারি যে, কর্তব্যের পক্ষে সরস না হইলেও চলে, এমন-কি, না হইলে ভালো চলে। লড়াই, লড়াই, লড়াই ! আমাদিগকে বড়াই করিতে হইবে যে, আনন্দকে অবজ্ঞা করি আমরা এমনি বাহাদুর । চন্দন মাখিতে আমাদের লজা, তাই রাই সরিষায় বেলেত্তারা মাখিয়া আমরা দাপাদাপি করি । আমার লাজ ঐ