পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8ግዒ আরোপ করায় যে নিঃস্বাৰ্থ দুঃখজনকতা আছে দলে-বলে নিন্দসাধনার ভৈরবীচক্রে বসে নিন্দুক ভোগ করে তাই। ব্যাপারটা নিষ্ঠুর এবং কদৰ্য, কিন্তু তীব্ৰ তার আস্বাদন । যার প্রতি আমরা উদাসীন সে আমাদের সুখ দেয় না, কিন্তু নিন্দার পাত্র আমাদের অনুভূতিকে প্রবলভাবে উদ্দীপ্ত করে রাখে। এই হেতুই পরের দুঃখকে উপভোগ্য সামগ্ৰী করে নেওয়া মানুষ-বিশেষের কাছে কেন বিলাসের অঙ্গরূপে গণ্য হয়, কেন মহিষের মতো অত বড়ো প্ৰকাণ্ড প্ৰবল জন্তুকে বলি দেবার সঙ্গে সঙ্গে রক্তমাখা উন্মত্ত নৃত্য সম্ভবপর হতে পারে, তার কারণ বোঝা সহজ । দুঃখের অভিজ্ঞতায় আমাদের চেতনা আলোড়িত হয়ে ওঠে। দুঃখের কটুম্বাদে দুই চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকলেও তা উপাদেয়। দুঃখের অনুভূতি সহজ আরামবোধের চেয়ে প্রবলতর । ট্রাজেডির মূল্য এই নিয়ে । কৈকেয়ীর প্ররোচনায় রামচন্দ্রের নির্বােসন, মন্থরার উল্লাস, দশরথের মৃত্যু, এর মধ্যে ভালো কিছুই নেই। সহজ ভাষায় যাকে আমরা সুন্দর বলি এ ঘটনা তার সমশ্রেণীর নয়, এ কথা মানতেই হবে । তবু এই ঘটনা নিয়ে কত কাব্য নাটক ছবি গান পাচলি বহুকাল থেকে চলে আসছে ; ভিড় জমছে কত ; আনন্দ পাচ্ছে সবাই । এতেই আছে বেগবান অভিজ্ঞতায় ব্যক্তিপুরুষের প্রবল আত্মানুভূতি । বদ্ধ জল। যেমন বোবা, গুমটি হাওয়া যেমন আত্মপরিচয়হীন, তেমনি প্রাত্যহিক আধমরা অভ্যাসের একটানা আবৃত্তি ঘা দেয় না চেতনায়, তাতে সত্তাবোধ নিস্তেজ হয়ে থাকে । তাই দুঃখে বিপদে বিদ্রোহে বিপ্লবে অপ্রকাশের আবেশ কাটিয়ে মানুষ আপনাকে প্ৰবল আবেগে উপলব্ধি করতে চায় । একদিন এই কথাটি আমার কোনো একটি কবিতায় লিখেছিলেম । বলেছিলেম, আমার অন্তরতম আমি আলস্যে আবেশে বিলাসের প্রশ্রয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ; নির্দয় আঘাতে তার অসাড়তা ঘুচিয়ে তাকে জাগিয়ে তুলে তবেই সেই আমার আপনাকে নিবিড় ক’রে পাই, সেই পাওয়াতেই আনন্দ । এত কাল আমি রেখেছিনু তারে যতনভরে শয়ন-’পরে ; ব্যথা পাছে লাগে, দুখ পাছে জাগে, নিশিদিন তাই বহু অনুরাগে বাসরশয়ন করেছি। রচন কুসুমথরে, দুয়ার রুধিয়া রেখেছিনু তারে গোপন ঘরে । श@न्मउँछ6 | শেষে সুখের শয়নে শ্রান্ত পরান আলস্যরসে আবেশবশে । পরশা করিলে জাগে না সে আর, কুসুমের হার লাগে। গুরুভার, ঘুমে জাগরণে মিশি একাকার নিশিদিবসে ; বেদনবিহীন অসাড় বিরাগ মরমে পাশে আবেশবশে । তাই ভেবেছি আজিকে খেলিতে হইবে নূতন খেলা রাত্ৰিবেলা । মরণদোলায় ধরি রশিগাছি বসিব দুজনে বড়ো কাছাকাছি, ঝঙ্কা আসিয়া অট্ট হাসিয়া মারিবে ঠেলা, প্ৰাণেতে আমাতে খেলিব দুজনে ঝুলন-খেলা নিশীথ কেলা । আমাদের শাস্ত্ৰ বলেন তং বেদাং পুরুষং বেদ যথা মা বো মৃত্যঃ পরিব্যথাঃ ।