পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8. আমাদের দেশে একপ্রকারের সাহিত্যবিচার দেখি যাতে নানা অবান্তর কারণ দেখিয়ে সাহিত্যের এই প্ৰত্যক্ষগোচরতার মূল্য লাঘব করা হয় । হয়তো কোনো মানবচরিত্ৰজ্ঞ বলেন, শকুনির মতো অমান অবিমিশ্র দুৰ্বত্ততা স্বাভাবিক নয়, ইয়াগোর অহৈতুক বিদ্বেষবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মহাদগুণ থাকা উচিত ছিল ; বলেন, যেহেতু কৈকেয়ী বা লেডি ম্যাকবেথ, হিড়িম্বা বা শূৰ্পণখা, নারী, মায়ের জাত, এইজন্যে এদের চরিত্রে ঈর্ষা বা কদাশয়তার অন্ত নিবিড় কালিমা আরোপ করা অশ্রদ্ধেয় । সাহিত্যের তরফ থেকে বলবার কথা এই যে, এখানে আর কোনো তর্কই গ্ৰাহ্য নয় ; কেবল এই জবাবটা পেলেই হল, যে-চরিত্রের অবতারণা হয়েছে তা সৃষ্টির কোঠায় উঠেছে, তা প্রত্যক্ষ । কোনো-এক খেয়ালে সৃষ্টিকর্তা জিরাফ জন্তুটাকে রচনা করলেন । তার সমালোচক বলতে পারে, এর গলাটা না গোরুর মতো, না হরিণের মতো, বাঘ ভালুকের মতো তো নয়ই, এর পশ্চাদভাগের ঢালু ভঙ্গিটা সাধারণ চতুষ্পদ-সমাজে চলতি নেই, অতএব ইত্যাদি । সমস্ত আপত্তির বিরুদ্ধে একটিমাত্র জবাব এই যে, ঐ জন্তুটা জীবসৃষ্টিপর্যায়ে সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষ । ও বলছে ‘আমি আছি ; না থাকাই উচিত ছিল বলাটা টিকবে না। যাকে সৃষ্টি বলি তার নিঃসংশয় প্রকাশই তার অস্তিত্বের চরম কৈফিয়ত । সাহিত্যের সৃষ্টির সঙ্গে বিধাতার সৃষ্টির এইখানেই মিল ; সেই সৃষ্টিতেই উট জন্তুটা হয়েছে বলেই হয়েছে, উটপাখিরও হয়ে ७र्टा छद्धा अन्ना छावनिश् ि(नई | মানুষও একেবারে শিশুকাল থেকেই এই আনন্দ পেয়েছে, প্রত্যক্ষ বাস্তবতার আনন্দ । এই বাস্তবতার মানে এমন নয় যা সন্দাসর্বদা হয়ে থাকে, যুক্তিসংগত । যে-কোনো রূপ নিয়ে যা স্পষ্ট করে চেতনাকে স্পর্শ করে তাই বাস্তব । ছন্দে ভাষায় ভঙ্গিতে ইঙ্গিতে যখন সেই বাস্তবতা জাগিয়ে তোলে, সে তখন ভাষায় রচিত একটি শিল্পীবন্ত হয়ে ওঠে । তার কোনো ব্যাবহারিক অর্থ না থাকতে পারে, VICS are grist f <ert R. It tease us out of thought as doth eternity ve3 96QV5 pGar 63 | বৃষ্টি পড়ে ঝমােঝম, এ পারেতে লঙ্কা গাছটি রাঙা টুকটুক করেগুণবতী ভাই আমার, মন কেমন করে । এর বিষয়টি অতি সামান্য । কিন্তু, ছন্দের দোল খেয়ে এ যেন একটা স্পর্শযোগ্য পদার্থ হয়ে উঠেছে। ব্যাকরণের ভুল থাকা সত্ত্বেও । ডালিমগাছে পরাভু নাচে, “তাক ধুমধুম বান্দ্যি বাজে । শুনে শিশু খুশি হয়ে ওঠে। এ একটা সুস্পষ্ট চলন্ত জিনিস, যেন একটা ছন্দে-গড়া পতঙ্গ ; সে আছে, সে উড়ছে, আর কিছুই নয়, এতেই কৌতুক । তাই শিশুকাল থেকে মানুষ বলছে ‘গল্প বলো ; সেই গল্পকে বলে রূপকথা। রূপকথাই সে বটে ; তাতে না থাকতে পারে। ঐতিহাসিক তথ্য, না থাকতে পারে আবশ্যক সংবাদ, সম্ভবপরতা সম্বন্ধেও তার হয়তো কোনো কৈফিয়ত নেই। সে কোনো-একটা রূপ দাড় করায় মনের সামনে, তার প্রতি ঔৎসুক্য জাগিয়ে তোলে, তাতে শূন্যতা দূর করে ; সে বাস্তব। গল্প শুরু করা গেল এক ছিল মোটা কেঁদো বাঘ, গায়ে তার কালো কালো দাগ । বোহারাকে খেতে গিয়ে ঘরে আয়নাটা পড়েছে। নজরে । এক দুটে পালালো বোহারা, বাঘ দেখে আপন চেহারা । গা গা করে রেগে ওঠে ডেকে, গায়ে দাগ কে দিয়েছে ঐকে ।