পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6ሱ\ኃbr hr রবীন্দ্র-রচনাবলী বর্তমানের চেহারা যেমনি হােক, তবু এই আশা এই বিশ্বাস মনে দৃঢ় করিয়াছি যে, পশ্চিম পূর্বের সহিত মিলিবে । কিন্তু এইখানে আমাদেরও কর্তব্য আছে । আমরা যদি ছোটো হইয়া ভয় পাই তবে ইংরেজও ছোটাে হইয়া ভয় দেখাইবে । ছোটাে-ইংরেজের সমস্ত জোর আমাদের ছোটাে শক্তির উপরে । পৃথিবীর সেই ভাবী যুগ আসিয়াছে, অন্ত্রের বিরুদ্ধে নিরন্ত্রকে দাড়াইতে হইবে । সেদিন, যে মারিতে পরিবে তার জিত হইবে না, যে মরিতে পরিবে তারই জয় হইবে । সেদিন দুঃখ দেয় যে-মানুষ তার পরাভব হইবে, দুঃখ পায় যে-মানুষ তারই শেষ গৌরব । সেদিন মাংসপেশীর সহিত আত্মার শক্তির সংগ্রাম হইয়া মানুষ জানাইয়া দিবে যে সে পশু নয়, প্ৰাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম সে অতিক্রম করিয়াছে। এই মহত্ত্ব প্রমাণ করিবার ভার আমাদের উপর আছে। পূর্ব-পশ্চিমের যদি মিলন ঘটে। তবে একটা মহৎ আইডিয়ালের উপর হইবে । তাহা নিছক অনুগ্রহের উপরে হইবে না । এবং কামান বন্দুক এবং রণতরীর উপরও হইবে না । দুঃখকে আমাদের সহায় করিতে হইবে, মৃত্যুকে আমাদের সহায় করিতে হইবে, তবে মৃত্যুঞ্জয় আমাদের সহায় হইবেন । আমরা যদি শক্তি না পাই তবে অশক্তের সহিত শক্তের মিলন সম্পূর্ণ হইতে পরিবে না। একতরফা আধিপত্যের যোগ যোগই নহে। আমাদিগকে নিজের শক্তিতেই পরের শক্তির সঙ্গে সন্ধি করিতে হইবে । সেই শক্তি ধার-করা শক্তি, ভিক্ষা-করা শক্তি না হউক । তাহা সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য দুঃখ সহিবার অপরিসীম শক্তি হউক । জগতে কাহারও সাধ্য নাই, দুঃখের শক্তিকে ত্যাগের শক্তিকে ধর্মের শক্তিকে বলির পশুর মতো শিকল দিয়া বাধিয়া রাখিতে পারে । তাহা হারিয়া জেতে, তাহা মরিয়া অমর হয়, এবং মাংসপেশী আপন জয়স্তম্ভ নির্মাণ করিতে গিয়া হঠাৎ দেখিতে পায় সে পক্ষাঘাতে অচল হইয়াছে । WSKRG S 088 বাতায়নিকের পত্ৰ এক দিকে আমাদের বিশ্বজগৎ, আর-এক দিকে আমাদের কর্মসংসার । সংসারটাকে নিয়ে আমাদের যত ভাবনা, জগৎটাকে নিয়ে আমাদের কোনো দায় নেই। এইজন্যে জগতের সঙ্গে আমাদের অহেতুক আত্মীয়তার সম্বন্ধটাকে যতটা পারি। আড়াল করে রাখতে হয়, নইলে সংসারের ভাগে মনোযোগের কমতি পড়ে কাজের ক্ষতি হয় । তাই আমাদের আপিস থেকে বিশ্বকে বারোমাস ঠেকিয়ে রাখতে রাখতে এমনি হয় যে, দরকার পড়লেও আর তার উদ্দেশ পাওয়া যায় না । দরকার পড়েও । কেননা বিশ্বটা সত্য । সত্যের সঙ্গে কাজের সম্বন্ধ নাও যদি থাকে, তবু অন্য সম্বন্ধ আছেই। সেই সম্বন্ধকে অন্যমনস্ক হয়ে অস্বীকার করলেও তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অবশেষে কর্মে ক্লান্তি আসে, দিনের আলো স্নান হয়, সংসারের বদ্ধ আয়তনের মধ্যে গুমটি অসহ্য হয়ে উঠতে থাকে । তখন মন তার হিসাবের পাকা খাতা বন্ধ করে বলে ওঠে, বিশ্বকে আমার চাই, নইলে আর বাচি GN ! কিন্তু নিকটের সব দরজাগুলোর তলায় মরচে পড়ে গেছে, চাবি আর খোলে না । রেলভাড়া করে দূরে যেতে হয় । আপিসের ছাদটার উপরেই এবং তার আশেপাশেই যে-আকাশ নীল, যে-ধারণী শ্যামল, যো-জলের ধারা মুখরিত, তাকেই দেখবার জন্যে ছুটে যেতে হয় এটােয়া কাটােয়া ছোটােনাগপুরে । 1 এত কথা হঠাৎ আমার মনে উদয় হল কেন বলি। তোমরা সবাই জানো, পুরাকালে একসময়ে আমি সম্পূর্ণ বেকার ছিলুম। অর্থাৎ আমার প্রধান সম্বন্ধ ছিল বিশ্বজগতের সঙ্গে । তার পরে কিছুকাল থেকে সেই আমার প্রথম বয়সের সমস্ত অকৃতকর্মের বকেয়া শোধে লেগে গিয়েছিলুম। অর্থাৎ