পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कोंकg: (፩ ዒ እS আপন জয়গান গাইয়ে নিলে। লজ্জিত কবিরা কৈফিয়ত দেবার ছলে মাথা চুলকিয়ে বললেন, কী করব, আমার উপর স্বপ্নে আদেশ হয়েছে। এই স্বপ্ন একদিন আমাদের সমস্ত দেশের উপর ভর করেছিল । সেদিনকার ইতিহাস স্পষ্ট নয় । ইতিহাসের যে-একটা আবছায়া দেখতে পাচ্ছি সেটা এইরকমবাংলা সাহিত্য যখন তার অব্যক্ত কারণ-সমুদ্রের ভিতর থেকে প্রবাল-দ্বীপের মতো প্ৰথম মাথা তুলে দেখা দিলে তখন বৌদ্ধধর্ম জীৰ্ণ হয়ে বিদীর্ণ হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে নানাপ্রকার বিকৃতিতে পরিণত হচ্ছে। স্বপ্নে যেমন এক থেকে আর হয়, তেমনি করেই বুদ্ধ তখন শিব হয়ে দাড়িয়েছিলেন । শিব ত্যাগী, শিব ভিক্ষু, শিব বেদবিরুদ্ধ, শিব সর্বসাধারণের। বৈদিক দক্ষের সঙ্গে এই শিবের বিরোধের কথা কবিকঙ্কণ এবং অন্নদামঙ্গলের গোড়াতেই প্রকাশিত আছে। শিবও দেখি বুদ্ধের মতো নির্বাণমুক্তির পক্ষে ; প্রলয়েই র্তার আনন্দ । কিন্তু এই শাস্তির দেবতা, ত্যাগের দেবতা টিকল না । য়ুরোপেও আধুনিক শক্তিপূজক বলছেন, যিশুর মতো অমান গরিবের দেবতা, নিরীহ দেবতা, আমন নেহাত ফিকে রক্তের দেবতা নিয়ে আমাদের চলবে না । আমাদের এমন দেবতা চাই জোর করে যে কেড়ে নিতে পারে, যেমন করে হােক যে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে না। মানে বাধা, না পায় ব্যথা, না করে লজ্জা । কিন্তু যুরোপে এই-যে বুলি উঠেছে সে কাদের পান-সভার বুলি। যারা জিতেছে, যারা লুটেছে, পৃথিবীটাকে টুকরো টুকরো করে যারা তাদের মদের চাট বানিয়ে খাচ্ছে । আমাদের দেশের মঙ্গলগানের আসরেও ঐ বুলিই উঠেছিল। কিন্তু এ বুলি কোনখান থেকে উঠল। যাদের অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, আশ্রয় নেই, সম্মান নেই। সেই হতভাগাদের স্বপ্নের থেকে । তারা স্বপ্ন দেখিল । কখন । যখন নারায়ণ, পরাশর, এড়াইল দামোদর, উপনীত কুচট্যানগরে । তৈল বিনা কৈলু স্নান, করিলীলু। উদকপান, শিশু কাদে ওদনের তরে । আশ্রম পুখরি-আড়া, নৈবেদ্য শালুক পোড়া, পূজা কৈানু কুমুদ প্ৰসূনে । ক্ষুধাভয় পরিশ্রমে, নিদ্রা যাই সেই ধামে, চণ্ডী দেখা দিলেন স্বপনে । সেদিনকার শক্তির স্বপ্ন স্বপ্নমাত্র, সে স্বপ্নের মূল ক্ষুধা ভয় পরিশ্রমের মধ্যে । শোনা গেছে ইতিহাসের গান অমিত্ৰাক্ষরে হয় না, এর চরণে-চরণে মিল । সেই পাঁচশো বছর পূর্বের এক চরণের সঙ্গে আজ পাচশো বছর পরের এক চরণের চমৎকার মিল শোনা যাচ্ছে না কি । যুরোপের শক্তিপূজক আজ বুক ফুলিয়ে বড়ো সমারোহেই শক্তির পুজো করছেন ; মদে তার দুই চক্ষু জবাফুলের মতো টকটক করছে ; খাড়া শাণিত ; বলির পশু যুপে বাধা । তারা কেউ কেউ বলছেন, আমরা যিশুকে মানি নে, আবার কেউ কেউ ভারতচন্দ্রের মতো গোজামিলন দিয়ে বলছেন, যিশুর সঙ্গে শক্তির সঙ্গে ভেদ করে দেওয়া ঠিক নয়, অর্ধনারীশ্বর মুর্তিতে দুজনকেই সমান মানবার মন্ত্র আছে। অর্থাৎ, একদল মদ খাচ্ছেন রাজাসনে বসে, আর-এক দল পুলপিটে চড়ে । আর আমরাও বলছি, শিবকে মানব না । শিবকে মানা কাপুরুষতা । আমরা চণ্ডীর মঙ্গল গাইতে বসেছি। কিন্তু সে মঙ্গলগান স্বপ্নলব্ধ । ক্ষুধা-ভয়-পরিশ্রমের স্বপ্ন। জয়ীর চণ্ডীপূজায় আর পরাজিতের চণ্ডীগানে এই তফাত । স্বপ্নেতেই যে আমাদের চণ্ডীগানের আদি এবং স্বপ্নেতেই যে তার অন্ত তার প্রমাণ কী । ঐ দেখো-না ব্যাধের দশা, তার স্ত্রী ফুল্লিরার বারমস্যা একবার শোনো ; কিন্তু হল কী । হঠাৎ খামখেয়ালী শক্তি বিনা কারণে তাকে এমন-একটা আঙটি দিলেন যে, ঘরে আর টাকা ধরে না । কলিঙ্গরাজের সঙ্গে