পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VObr রবীন্দ্র-রচনাবলী leaving their children and womenfolk behind, to take care of themselves as best as they could, thinking perhaps honestly that if the Moplas attack them without any previous molestation, God, the almighty and the Omniscient, is there to teach them a lesson and even to take a revenge on their behalf. ডাক্তার মুঞ্জের এ কথাটির মানে হচ্ছে এই যে, হিন্দু ঐহিককে ঐহিকের নিয়মে ব্যবহার করতে অভ্যাস করে নি, সে নিত্যে অনিত্যে খিচুড়ি পাকিয়ে বুদ্ধিটাকে দিয়েছে জলে । বুদ্ধির জায়গায় বিধি, এবং আত্মশক্তির জায়গায় ভগবানকে দাড় করিয়ে দিয়ে এরা আত্মাবমাননায় স্বয়ং ভগবানের অবমাননা করে বলেই দুঃখ পায়, সে কথা মনের জড়ত্বশতই বোঝে না । ডাক্তার মুঞ্জের রিপোর্টের আর-একটা অংশে তিনি বলছেন, আটশে বৎসর আগে মালাবারের হিন্দুরাজা ব্ৰাহ্মণ্যমন্ত্রীদের পরামর্শে তার রাজ্যে আরবদের বাসস্থাপনের জন্যে বিশেষভাবে সুবিধা করে দিয়েছিলেন । এমন-কি, হিন্দুদের মুসলমান করবার কাজে তিনি আরবদের এতদূর প্রশ্রয় দিয়েছিলেন যে, তার আইন-মতে প্ৰত্যেক জেলে পরিবার থেকে একজন হিন্দুকে মুসলমান হতেই হত । এর প্রধান কারণ, ধর্মপ্রাণ রাজা ও তার মন্ত্রীরা সমুদ্রযাত্রা ধর্মবিরুদ্ধ বলেই মেনে নিয়েছিলেন, তাই মালাবারের সমুদ্রতীরবর্তী রােজ্যরক্ষার ভার সেই সকল মুসলমানের হাতেই ছিল, সমুদ্রযাত্রার বৈধতা সম্বন্ধে যারা বুদ্ধিকে মানত, মনুকে মানত না । বুদ্ধিকে না মেনে অবুদ্ধিকে মানাই যাদের ধর্ম রাজাসনে বসেও তারা স্বাধীন হয় না। তারা কর্মের মধ্যাহ্নকালকেও সুপ্তির নিশীথরাত্রি বানিয়ে তোলে। এইজনেই তাদের ঠিক দুপপার বেলা ভূতে মারে ঢেলা ৷ মালবারের রাজা একদা নিজে রাজার মুখোশ-মাত্র পরে অবুদ্ধিকে রাজাসন ছেড়ে দিয়েছিলেন । সেই অবুদ্ধি মালাবারের হিন্দুসিংহাসনে এখনাে রাজা আছে। তাই হিন্দু এখনাে মাের খায় আর উপরের দিকে তাকিয়ে বলে, ভগবান আছেন । সমস্ত ভারতবর্ষ জুড়ে আমরা অবুদ্ধিকে রাজা করে দিয়ে তার কাছে হাত জোড় করে আছি । সেই অবুদ্ধির রাজত্বকে- সেই বিধাতার বিধিবিরুদ্ধ ভয়ংকর ফাকটাকে কখনো পাঠান, কখনো মোগল, কখনো ইংরেজ এসে পূৰ্ণ করে বসছে। বাইরে থেকে এদের মারটাকেই দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু এরা হল উপলক্ষ । এরা এক-একটা ঢেলামাত্র, এরা ভূত নয় । আমরা মধ্যাহ্নকালের আলোতেও বুদ্ধির চোখ বুজিয়ে দিয়ে অবুদ্ধির ভূতকে ডেকে এনেছি, সমস্ত তারই কর্ম। তাই ঠিক দুপপ'র বেলায় যখন জাগ্ৰত বিশ্বসংসার চিন্তা করছে, কাজ করছে, তখন পিছন দিক থেকে কেবল আমাদেরই পিঠের উপর ঠিক দুপপার বেলা ভূতে মারে ঢেলা ৷ সেই আমাদের চারি দিকে ভেদ এনেছে, সেই আমাদের কাধের উপর। পরবশতকে চড়িয়ে দিয়েছেসেই আমাদের এতদূর অন্ধ করে দিয়েছে যে যখন চীৎকারশব্দে ঢেলাকে গাল পেড়ে গলা ভাঙছি তখন সেই ভূতটাকে পরমাত্মীয় পরমারাধ্য বলে তাকেই আমাদের সমস্ত বাস্তুভিটে দেবত্র করে ছেড়ে দিয়েছি । ঢেলার দিকে তাকালে আমাদের পরিত্রাণের আশা থাকে না ; কেননা জগতে ঢ়েলা অসংখ্য, ঢেলা পথে ঘাটে, ঢেলা একটা ফুরোলে হাজারটা আসে- কিন্তু ভূত একটা । সেই ভূতটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে ঢেলাগুলো পায়ে পড়ে থাকে, গায়ে পড়ে না । ভারতবর্ষের সেই পুরাতন প্রার্থনাকে আজ আবার সমস্ত প্ৰাণমন দিয়ে উচ্চারণ করবার সময় এসেছে, শুধু কণ্ঠ দিয়ে নয়, চিন্তা দিয়ে, কর্ম দিয়ে, শ্রদ্ধা দিয়ে, পরস্পরের প্রতি ব্যবহার দিয়ে ; যা একঃ অবৰ্ণঃ, যিনি এক এবং সকল বৰ্ণভেদের অতীত, স নাে বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনত্ত্ব, তিনিই আমাদের শুভবুদ্ধি দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত করুন । ଅଧଃସ୍ଥ ୩ ଧଏ୬୯୦୦