পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VeStr ब्रीका-ब्रा5नावर्टली যেখানে সকল মানুষের মিলনের প্রতিষ্ঠা এখ্রব । অর্থাৎ, তারা ভারতের সেই মন্ত্ৰই গ্ৰহণ করেছিলেন। যাতে আছে, যারা সকলকে আপনার মধ্যে এক করে দেখে তারাই সত্য দেখে । তখনকার দিনের অনেক যোদ্ধা অনেক লড়াই করেছেন, বিদেশী-ছাঁচে-ঢালা ইতিহাসে তাদেরই নাম ও কীর্তি লিখিত হয়েছে। সে-সব যোদ্ধারা আজ তাদের কৃত কীর্তিস্তম্ভের ভগ্নশেষ ধূলিস্তুপের মধ্যে মিশিয়ে আছেন। কিন্তু আজও ভারতের প্রাণস্রোতের মধ্যে সেই সকল সাধকের অমরবাণী-ধারা প্ৰবাহিত আছে ; সেখান থেকে আমাদের প্রাণের প্রেরণা যদি আমরা নিতে পারি তা হলে তারই জোরে আমাদের রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি কর্মনীতি সবই বল পেয়ে উঠতে পারে । সত্যবাণী যখন আমাদের প্রাণকে গভীর ভাবে উদবোধিত করে তখন সেই প্ৰাণ সকল দিকেই নিজের প্রকাশকে সার্ধক করে। তখন সেই প্ৰাণ সৃষ্টির উদ্যমে পূর্ণ হয়ে ওঠে। চিত্তের উপর সত্যের সংঘাতের প্রমাণ হচ্ছে এই সৃষ্টিশক্তির সচেষ্টতা । বৌদ্ধধর্ম সন্ন্যাসীর ধর্ম । কিন্তু তা সত্ত্বেও যখন দেখি তারই প্রবর্তনায় গুহাগহবরে চৈতাবিহারে বিপুলশক্তিসাধ্য শিল্পকলা অপর্যাপ্ত প্ৰকাশ পেয়ে গেছে তখন বুঝতে পারি, বৌদ্ধধর্ম মানুষের অন্তরতম মনে এমন একটি সত্যবোধ জাগিয়েছে যা তার সমস্ত প্ৰকৃতিকে সফল করেছে, যা তার স্বভাবকে পঙ্গু করে নি । ভারতের বাহিরে ভারতবর্ষ যেখানে তার মৈত্রীর সোনার কাঠি দিয়ে স্পর্শ করেছে সেখানেই শিল্পকলার কী প্ৰভূত ও পরমাশ্চর্য বিকাশ হয়েছে। শিল্পীসৃষ্টিমহিমায় সে-সকল দেশ মহিমান্বিত হয়ে উঠেছে । অথচ সেখানকার লোকের সমজাতীয়দের দেখো, দেখবে তারা নরঘাতক, তারা শিল্পসম্পদহীন । এার্মান-সকল নির্যালোক চিত্তে আলো জ্বালালে দয়াধর্ম ত্যাগধর্ম মৈত্রীধর্মের মহতী বাণীর দ্বারা । সেখানকার লোকে সামান্য বেশভুষা-ভাষার পরিবর্তনের দ্বারা স্বাতন্ত্র্য পেয়েছে তা নয় ; সৃষ্টি করবার সুপ্ত শক্তি তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে- সে কী পরমাদ্ভূত সৃষ্টি । এই সকল দ্বীপেরই আশেপাশে আরো তো অনেক দ্বীপ আছে, সেখানে আমরা বরবুদরা দেখি নে কেন, সে-সব জায়গায় “আঙ্করবট”-এর সমতুল্য বা সমজাতীয় কিছু নেই কেন । সত্যের জাগরণমন্ত্র যে সেখানে পৌছায় নি । মানুষকে অনুকরণে প্ৰবৃত্ত করার মধ্যে গৌরব নেই, কিন্তু মানুষের সুপ্ত শক্তিকে মুক্তিদান করার মতো এত বড়ো গৌরবের কথা আর কি কিছু আছে। লোকে যখন দরিদ্র হয় তখন বাইরের দিকে গৌরব খুঁজে বেড়ায় । তখন কথা বলে গৌরব করতে চায়, তখন পুঁথি থেকে শ্লোক খুঁটে খুঁটে গৌরবের মালমসলা ভগ্নস্তুপ থেকে সঞ্চয় করতে থাকে । এমনি করে সত্যকে ব্যবহার থেকে দূরে রেখে যদি গলার জোরে পুরাতন গৌরবের বড়াই করতে বসি তবে আমাদের ধিক । অহংকার করবার জন্যে সত্যের ব্যবহার সত্যের অবমাননা । আমার মনের একান্ত প্রার্থনা এই যে, সত্যবাণীকে কঁধে বুলিয়ে জয়ঢাকা করে তাকে যেন বাজিয়ে না বেড়াই, বাইরের লোককে চমক লাগাবার জন্যে যেন তাকে অলংকার মাত্র না করি, যেন নিজেরই একান্ত আন্তরিক প্রয়োজনের জন্যেই তার সন্ধান ও সাধনা করতে পারি । জাভায় যখন যাব তখন মনকে অহংকারমুক্ত করে সত্যের অমৃতমন্ত্রের ক্রিয়াটি দেখে যেন নম্র হতে পারি । সেই মৈত্রীর মহামন্ত্রটি নিজের মধ্যেই পাওয়া চাই, তা হলেই আমার চিত্তে যেখানে অরণ্য সেখানে মন্দির উঠবে, যেখানে মরুভূমি সেখানে সৌন্দর্যের রাসবৃষ্টি হবে, জীবনের তপস্যা জয়যুক্ত হয়ে সার্থক হয়ে উঠবে । are SOOB