পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( 8 উদয়ন । শান্তিনিকেতন মিলের কাব্য / নারীকে আর পুরুষকে যেই মিলিয়ে দিলেন বিধি পদ্য কাব্যে মানবজীবন পেল মিলের নিধি । কেবল যদি পুরুষ নিয়ে থাকত। এ সংসার, গদ্য কাব্যে এই জীবনটা হ’ত একাকার । প্রোটন এবং ইলেকট্রনের যুগল মিলনেই জগৎটা যে পদ্য তাহার প্রমাণ হল সেই । জলে এবং স্থলে মিলে ছন্দে লাগায় তাল, আকাশেতে মহাগদ্য বিছান মহাকাল । কারণ তিনি তপস্বী যে বিশ্ব র্তাহার জ্ঞানে, প্ৰলয় তাহার ধ্যানে । সৃষ্টিকাৰ্যে আলো এবং আঁধার অনন্ত কাল ধুয়ো ধরায় মিলের ছন্দ বাধার । জাগরণে আছেন তিনি শুদ্ধ জ্যোতির দেশে, আলো-আঁধার-’পরে তাহার স্বপ্ন বেড়ায় ভেসে । যারে বলি বাস্তব সে ছায়ার লিখন লিখা, অন্তবিহীন কল্পনাতে মহান মরীচিকা । বাস্তব যে অচল অটল বিশ্বকাব্যে তাই, তড়িৎকণার নৃত্য আছে বাস্তব তো নাই । গোলাপগুলোর পাপড়ি-চেয়ে শোভাটাই যে সত্য, কিন্তু শোভা কী পদার্থ কথায় হয় না। কথ্য । বিশুদ্ধ ইঙ্গিত সে মাত্র, তাহার অধিক কী সে, কিসের বা ইঙ্গিত সে জিনিস, ভেবে কে পায় দিশে । নিউসপেপার আছে পাবে প্ৰমাণযোগ্য বাক্য, মকদ্দমার দলিল আছে ঠিক কথাটার সাক্ষ্য । কাব্য বলে বেঠিক কথা, এক হয়ে যায় আরযেমন বেঠিক কথা বলে নিখিল সংসার । আজকে যাকে বাস্পপ দেখি কালকে দেখি তারা, কেমন করে বস্তু বলি প্ৰকাণ্ড ইশারা । ফোটা-ঝরার মধ্যখানে এই জগতের বাণী কী যে জানায় কালে কালে স্পষ্ট কি তা জানি । বিশ্ব থেকে ধার নিয়েছি। তাই আমরা কবিসত্য রূপে ফুটিয়ে তুলি অবাস্তবের ছবি । ছন্দ ভাষা বাস্তব নয়, মিল যে অবাস্তবনাই তাহাতে হাট-বাজারের গদ্য কলরব । হঁহা-য়ে না-য়ে যুগল নৃত্য কবির রঙ্গভূমে । এতক্ষণ তো জাগায় ছিলুম এখন চলি ঘুমে। ১৯ জানুয়ারি ১৯৪১ । সন্ধ্যা