পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর لا که ما দেশের ডান হাতে বা হাতে মিল কবিয়ে ইতিহাস গড়ে তোলা দুঃসাধ্য হয় । কিন্তু, তাই বলেই তো হাল ছেড়ে দেওয়া চলে না ; গ্রস্থি জটিল হয়ে পাকিযে উঠেছে বলে ক্রোধের বেগে সেটাকে টানাটানি কবে আৰো আঁট করে তোলা মূঢ়ত । বর্তমানের ঝাজে ভবিষাতের বীজটাকে পর্যন্ত অফলা করে ফেলা স্বজাতিক আত্মহত্যার প্রণালী । নানা আশু ও সুদূর কাবণে, অনেকদিনের পুঞ্জিত অপরাধে হিন্দু-মুসলমানের মিলনসমস্যা কঠিন হয়েছে, সেইজন্যেই অবিলম্বে এবং দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে তার সমাধানে প্ৰবৃত্ত হতে হবে । অপ্ৰসন্ন ভাগ্যের উপব রাগ করে তাকে দ্বিগুণ হনো করে তোলা চোরের উপর রাগ কবে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো । বর্তমান বাষ্টিক উদযোগে বোম্বাই প্রদেশে আন্দোলনের কাজটা সব চেয়ে সবেগে চলতে পেরেছিল। তাব অন্যতম কারণ, সেখানে হিন্দু-মুসলমানেব বিরোধ বাধিয়ে দেবার উপকরণ যথেষ্ট ছিল না । পার্সিতে হিন্দুতে দুই পক্ষ খাড়া করে তোলা সহজ হয় নি । কাবণ, পার্সি-সমাজ সাধারণত শিক্ষিত সমাজ, স্বদেশের কল্যাণ সম্বন্ধে পার্সিবা বুদ্ধিপূর্বক চিন্তা করতে জানে, তা ছাড়া তাদের মধ্যে ধর্মোন্মত্ততা নেই । বাংলাদেশে আমরা আছি। জতুগৃহে আগুন লাগাতে বেশিক্ষণ লাগে না । বাংলাদেশে পরের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে যখনই নামি ঠিক সেই সময়টাতেই নিজের ঘর সামলানো অসাধা হযে ওঠে । এই দুর্যোগের কারণটা আমাদের এখানে গভীর করে শিকড় গেড়েছে, এ কথাটা মেনে নিতেই হবে । এ অবস্থায় শান্তমনে বুদ্ধিপূর্বক পৰস্পবের মধ্যে সন্ধিস্থাপনেব উপায় উদভাবনে যদি আমরা অক্ষম হই, বাঙালি-প্রকৃতি-সুলভ হৃদয়াবেগের ঝোকে যদি কেবলই জেদ জাগিয়ে স্পধা পাকিয়ে তুলি, তা হলে আমাদেব দুঃখের অন্ত থাকবে না এবং স্বজাতিক কল্যাণের পথ একান্ত দুগম হয়ে উঠবে । আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চোখ বুজে বলেন, সবই সহজ হয়ে যাবে যখন দেশটাকে নিজের হাতে পাব । অর্থাৎ, নিজেব বোঝাকে অবস্থাপরিবর্তনের কাধে চাপাতে পারব। এই ভরসায নিশ্চেষ্ট থাকবার এই ছুতো ! কথাটা একটু বিচার করে দেখা যাক । ধরে নেওয়া গেল গোল-বৈঠকের পরে দেশের শাসনভার আমরাই পাব । কিন্তু, দেশটাকে হাত-ফেরাফেরি করবার মাঝখানে একটা সুদীর্ঘ সন্ধিক্ষণ আছে । সিভিল-সাভিসের মেয়াদ কিছুকাল টিকে থাকতে বাধা । কিন্তু, সেইদিনকার সিভিল-সার্ভিস হবে ঘা-খাওয়া নেকড়ে বাঘের মতো । মন তার গরম হয়ে থাকবার কথা । সেই সময়টুকুর মধ্যে দেশের লোক এবং বিদেশের লোকের কাছে কথাটা দেগো দেগো দেওয়া তার পক্ষে দরকার হবে যে, ব্রিটিশরাজের পাহারা আলগা হবামাত্রই অরাজকতার কালসাপ নানা গর্ত থেকে বেরিয়ে চারি দিকেই ফণা তুলে আছে, তাই আমরা স্বদেশের দায়িত্বভার নিতে সম্পূর্ণ অক্ষম । আমাদের আপনি লোকদেরকে দিয়েও এ কথা কবুল করিয়ে নেবার ইচ্ছা তার স্বভাবতই হবে যে, আগেকার আমলে অবস্থা ছিল ভালো ! সেই যুগান্তরের সময়ে যে যে গুহায় আমাদের আত্মীয়বিদ্বেষেব মারগুলো লুকিয়ে আছে সেই সেইখানে খুব করেই খোচা খাবে। সেইটি আমাদের বিষম পরীক্ষার সময় । সে পরীক্ষা সমস্ত পৃথিবীর কাছে। এখন থেকে সর্বপ্রকারে প্ৰস্তুত থাকতে হবে যেন বিশ্বজগতের দৃষ্টির সামনে মৃঢ়তায় বর্বরতায় আমাদের নূতন ইতিহাসের মুখে কালি না পডে । sifike Y \Deb,