পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

° の 。 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দিলে সরিয়ে ঘরের এক ধারে । মেঝের উপর ছড়িয়ে রইল ছেড়া চিঠির টুকরো। এল কুলির দল, আসবাবগুলো তুলে দিল মালগাড়িতে । শূন্য হয়ে গেল ঘর, কোথায় মিলিয়ে গেল তার স্বপ্নরূপ, তার রঙিন মায়া । যে-কেউ কোথাও নেই তার দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যাকাসে দেয়াল অবুঝের মতো । আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দেবার জন্যে শেষ পর্যন্ত রইল রমেশ । বললে, চিঠি লিখো কেমন থাক । আমার রোম্যানসটুকু স্বল্প মাপের পেয়ালায় ৷ এখনো তলায় কিছু রস আছে বাকি, আর কিছু আছে ব্যথা । আর দেরি হলে হাসির লেশও থাকত না, চোখের জলও যেত শুকিয়ে । ভাবছি মনে এসব কী বকচি ; ভারতচন্দ্ৰে আছে ‘সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর” । এতক্ষণ বিস্তৰ কথা বলা হল শেষকালে দাঁড়াল সব তার মিছে । কী করে বললুম, তোমাকে চিনেছি । তোমাকে ভোলাতে বসলুম, আপনাকে ভোলালম, এই কি চেনবার রাস্তা । যে বিস্ময়দৃষ্টি দিয়ে তুমি দেখেছি। এই জগৎকে সেই দৃষ্টি দিয়ে যদি আমি চাইতুমি তোমার দিকে তা হলেই দেখতুম তোমার সত্যকে । ঢাকা দিলুম তোমাকে মায়া দিয়ে, তোমার বিশ্বনিখিল থেকে সরিযে এনে কেটে ছেটে ছোটো করে তোমাকে ধরাতে চাইলুম আমার এই আড়াইশো-টিাকা-ভাডা ফ্ল্যাটটাতে । আজ আমার চেয়ে তোমাকে দেখাচ্ছে ছোটো, আর বলছি তোমাকে চিনেছি। ! —ববীন্দ্রসদনস্থ পাণ্ডুলিপি উপরের রচনাটির প্রথমার্ধ অনেক সংশোধন ও সম্মার্জন করিয়া রবীন্দ্ৰনাথ উহা পরে প্রতিমা দেবীকে আলমোডায় পাঠাইয়াছিলেন । কৌতুহলী পাঠক প্রতিমা দেবীর ‘চিত্ৰলেখা’ গ্রন্থের ভূমিক ও ‘মন্দিরার উক্তি’ লেখাটি এই প্রসঙ্গে দেখিতে পারেন । সেখানে ‘অনিলবাবু’কে বদলাইয়া নরেশবাবু করা হইয়াছে ! ‘নারী (পৃ. ১৮৪) কবিতার সামযিক পত্রে প্রকাশিত পাঠে কিছু কিছু পাঠাস্তব পাওয়া যায় । প্রথম দিকে ‘ সেই আদি ... সংগোপনে পাঠ সাময়িক পত্রে এইরূপ ছিল— তাহাবি সংকল্পচেছবি বিধাতার মনে আছে তার তপস্যার সংগোপনে । সন্ধান করিছে ফিরে ফিরে বাপকাৰ । অন্যানা পাঠান্তব- ‘ব্যক্তিম হিল্লোল’ স্থলে ’মদিব হিল্লোল” । “শাস্ত্রবচনের ঘেব স্থলে ‘বচনের ঘের” । “সকলি ফেলিয়া দূরে স্থলে "সকলি করিয়া দূর | পরের ছত্ৰে “সুরে স্থলে ‘সুর' } ‘ভুবনমোহিনী' স্থলে “ভুবনমোহন । ‘মর্তের মদিরা-মাঝে” স্থলে ‘মর্ত্যেব রূপের মাঝে” । শেষ অংশের (‘আদি স্বৰ্গলোক... সহচরী”) পাঠ এইরূপ ছিল যেন সৰ্ব্ব পরুিষের নির্বাসিত মন রূপ আর অরদাপের ঘটায় মিলন । মনে পড়ে যেন কবে ছিল অন্যালোকে অপূর্ব আলোকে । তারি ছবি আনে ধ্যানে ধরি সেথায় যে ছিল তার চিরাসহচৰী ।