পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AS 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বলিয়াছেন যে, “আজকাল বাংলাদেশে কবিরা যে-সাহিত্যের সৃষ্টি করিতেছে তাহাতে বাস্তবতা নাই, তাহা জনসাধারণের উপযোগী নহে, তাহাতে লোকশিক্ষার কাজ চলিবে না।” এমন কথা “একেবারে আমারই নাম ধরিয়া” কেহ কেহ প্রয়োগ করিতেছেন । এই প্রসঙ্গে রাধাকমল মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত (জ্যৈষ্ঠ ১৩:২১, পৃ. ১৯৫-২০৩) “লোকশিক্ষক বা জননায়ক’ এবং ‘সবুজ পত্ৰ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত (মাঘ ১৩২১, পৃ. ৬৯৮-৭১০) “সাহিত্যে বাস্তবতা’ প্ৰবন্ধ দুইটি দ্রষ্টব্য ও “প্রবাসীর প্রবন্ধটিতে লেখক সুস্পষ্ট অভিযোগ করিয়াছিলেন যে, “রবীন্দ্ৰ-সাহিত্য সার্বজনীন নহে” ; “রবীন্দ্ৰনাথ দরিদ্রের ক্ৰন্দন শুনিয়াছেন । তিনি দৈন্যের মধ্যে ‘বিশ্বাসের ছবি আঁকিয়াছেন । তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী আশার সংগীত গাহিয়াছেন । কিন্তু সে ছবি, সে সংগীত, জনসাধারণাকে, সমগ্ৰ জাতিকে, স্পর্শ করিতে পারে নাই ।” “সাহিত্য’, ‘তথ্য ও সত্য' এবং “সৃষ্টি- এই তিনটি প্ৰবন্ধ ১৩৩০ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ ফায়ুন তারিখে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে প্রদত্ত তিনটি বক্তৃতা । সেনেট হলে বক্তৃতা হইবার অব্যবহিত পরে প্রথম দুইটি বক্তৃতার অনুলিখন ‘সাহিত্যের মূলতত্ত্ব’ ও ‘সাহিত্যের রসতত্ত্ব’ নামে ১৩৩০। ফাল্লুনের “পরিচারিকা’ পত্রিকায় সর্বাগ্রে বাহির হয় । তৃতীয় বক্তৃতাটি “সাহিত্য” নামে ১৩৩১ বৈশাখের ‘পল্লীশ্ৰী’তে প্ৰকাশিত হয় । ১৩৩১ সালে “প্রবাসী’র জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় সংখ্যায় ‘কষ্টিপাথর' অংশ (পৃ. ২০১-০৩ ও ৩৪৮-৫২) এই প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য । সম্ভবত উক্ত অনুলিখন যথাযথ হয় নাই বিবেচনা করিয়া “বঙ্গবাণী’র জন্য রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বক্তৃতা তিনটি লিখিয়া দিয়াছিলেন । “সাহিত্য’ প্ৰবন্ধটির কয়েকটি বর্জিতাংশ ‘বঙ্গবাণী হইতে নিম্নে মুদ্রিত হইল - সূচনাংশ আমি অনেকদিন থেকেই প্ৰতিশ্রুত আছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়।মন্দিরে কিছু বলব। এতদিন, সেই প্রতিশ্রুতি আমি রক্ষা করতে পারি নি, তার কারণটা আমার প্রকৃতিগত । আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে, বাল্যকাল হতেই আমি স্কুল পালিয়ে বেড়িয়েছি, পারাৎপক্ষে বিদ্যামন্দিরের সীমানায় ধরা দিতে চাই নি । এখন আমার এই বয়সে যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরা পড়বার সম্ভাবনা হল তখন দিনের পর দিন কেবলই আমার প্রতিশ্রুতির দিন পিছিয়ে দিচ্ছি— ওটা সুদ্ধ ভীরুতাবশত । আজকার দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বলতে হলে শ্রোতা ও বক্তার সম্মান-রক্ষার্থে লিখে বলাই উচিত । নিজে নানা দিক থেকে চিন্তা ক’রে, আর এই বিষয়ে অন্য অন্য সবাই কে কী বলেছেন তা সংগ্রহ ও তুলনা ক’রে, আলোচনাটা বেশ ভালো বকম ক’বে করা উচিত । এই-সব নানা কথা ভেবেই তো আমি দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছি । ক্রমশই দেখছি, লেখাব বন্যাস চলে যাচ্ছে কতকাল থেকে ক্রমাগত লেখনী চালাচ্ছি, এখন লিখে লিখে একটা ক্লান্তি আমাকে অভিভূত ক’রে ফেলেছে । তা ছাড়া আমি কর্মজালে বিজড়িত হয়ে পডেছি । এবার যখন সুদূর চীন-যাত্রা কববার নিমন্ত্রণ পেয়েছি, তখন বহুমানভাজন আমাদের সভাপতি-মশায়"। আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন আমার প্রতিশ্রুতির কথা ! তিনি জানালেন যে, আমার তিনটি বক্তৃতার মধ্যে অস্তুত একটা যেন বলে যাই আমি তখন বললেম, আমার যা বলবার তা যদি আপনারা মুখে বলতে দেন তবে হয়তো আমি চেষ্টা করতে পারি । তিনি তাতেই ৬। বাধাকমল মুখোপাধ্যায্য কর্তৃক প্রণীত বর্তমান বাংলা সাহিতা’’ গ্রন্থে সংকলিত ৭ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।