পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Հ Օ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দাসগুপ্ত মহাশয় সাহিত্যের বিষয় । পরিচয় দেবার উপলক্ষে বিচারক হয়তো গর্ব করে বলে উঠবেন, জাতিতে উনি বৈদ্যা ! জিজ্ঞাসু বলবেন, “এহ বাহা । তখন বিচারক আবার গর্ব করে বলতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি অধ্যাপনা করেন, তার পদগৌরব এবং অর্থগৌরব প্রচুর । জিজ্ঞাসু আবার বলবেন, “এহ বাহা’ । তখন বিচারক সুর আরো চড়িয়ে বলবেন, উনি তত্ত্বশাস্ত্ৰে অসাধারণ পণ্ডিত ! হায় রে, এও সেই আধখানা বোল । ঐতিহাসিক সাহিত্যে এ-সব তথ্য সযত্নে সংগ্ৰহ করা চাই, কিন্তু রসসাহিত্যে এগুলিকে সযত্বেই বর্জন করতে হবে । উৎসাহী হোমিওপ্যাথ বাল্মীকিকে প্রশ্ন করে যে, বনবাসকালে নিঃসন্দেহ মাঝে মাঝে রামচন্দ্রের ম্যালেরিয়া হয়েছে তখন তিনি নিজের কিরকম চিকিৎসা করতেন । বাল্মীকি তার জন্টাশ্মশ্র নিয়ে চুপ ক’রে থাকেন, কোনো উত্তর দেন না ; ঐতি রামচরিতে রামচন্দ্রের সমর্থিত চিকিৎসাপদ্ধতি মূল্যবান তথ্য সন্দেহ নেই, কিন্তু সাহিত্যিক রামচরিতে ওকে স্থান দেওয়া অসম্ভব । এমনতরো বহুসহস্ৰ অতি প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বামায়ণ সম্ভবপর হয়েছে, তথাপি সেটা সপ্ত কাণ্ডর কম হল না ! আমি যে-কথাটি বলতে গিয়েছি সে হচ্ছে এই যে, সাহিত্যের বিষয়টি ব্যক্তিগত, শ্রেণীগত NR —প্ৰবাসী, কার্তিক ১৩৩৬, পৃ. ১৩১ এই গ্রন্থের ৪৫৯ পৃষ্ঠার ৩৫ ছাত্রের পরে একটি অতিরিক্ত বাকা ‘প্রবাসী’তে পাওয়া যায় ; তৃষ্ণার্তের জন্য আধখানা বেলের প্রভূত আয়োজন । -প্রবাসী, কার্তিক ১৩৩৬, পৃ. ১৩২ এই গ্রন্থের ৪৬০ পৃষ্ঠার প্রথম যে অনুচ্ছেদ শেষ হইয়াছে তাহার অনুবৃত্তিস্বরূপ “প্রবাসী’তে sig3 R কথা যখন উঠল, নিজের অভিজ্ঞতার কথাটা বললে আশা করি কেউ দোষ নেবেন না । কিছুদিন পর্বে একটি প্রবন্ধে পাওয়া গেল, আমার কবিতায় সত্ত্ব রজঃ এবং তম। এই তিন গুণের মধ্যে বজোগুণটাই সাহিত্যিক ল্যাবরেটরিতে অধিক পরিমাণে ধরা পডেছে ! এরকম তাত্ত্বিক কাকুক্তি প্ৰমাণ করা যায় না, কিন্তু অস্পষ্ট বলেই সেটা শুনতে হয় খুব মস্ত । এ-সব কথা ভারী ওজনের কথা ; আমাদের শাস্ত্রমানা দেশে এতে ক’রে লোকেও স্তম্ভিত হয় আমার আপত্তি এই যে, সাহিত্যাবিচারে এ-সব শব্দের কোনো স্থান নেই ; তবু যদি গুণের কথা উঠলই, তা হলে এ কথা মানতেই হবে। আমি ত্ৰিগুণাতীত নই, দ্বিগুণাতীতও নই, সম্ভবত সাধারণ মানুষের মতো আমার মধ্যে তিন গুণেরই স্থান আছে ; নিশ্চয়ই আমার লেখার কোথাও দেখা দেয়, তম । কোথাও বা বীজ, কোথাও বা সত্ত্ব পরিমাণে রজীটাই সব চেযে বেশি এ কথা প্ৰমাণ কবতে "পবন, কোমর বাধেন তারা এ লেখা ও লেখা, এ লাইন ও লাইন থেকে তার প্রমাণ ছেটে কেটে আনতে পারেন ! আবার যিনি আমার কাব্যকে সাত্ত্বিক ব’লে প্ৰমাণ করতে চান। তিনিও বেছে বেছে সাত্ত্বিক লাইনের সাক্ষী সারবন্দী করে দাড করাতে যদি চান মিথ্য সাক্ষা সাজাবার দরকার হবে না । কিন্তু, সাহিত্যের তরফে এ তর্কে লাভ কী ? উপাদান নিয়ে সাহিত্য নয়, রসময় ভাষারূপ নিয়েই সাহিতা । মাকবেথ' নাটকে তমোগুণ বেশি কিংবা বজোগুণ বেশি, কিংবা সাংখাদর্শনের সব গুণেরত তাতে অবিভব কিংবা অভাব এ কথা উত্থাপন করা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক তাত্ত্বিক যে-কোনো গুণই তাতে থাক বা না থাক সবসুদ্ধ মিলে ঐ রচনা একটি পরিপূর্ণ নাটক হয়ে উঠেছে ; প্ৰতিভার কোন মন্ত্রবলে তা হল তা কেউ বলতে পারে না সৃষ্টি আপনাকে আপনিই প্রমাণ করে. উপাদানবিশ্লেষণ দ্বারা নয়, নিজের সমগ্র সম্পূর্ণ রূপটি প্রকাশ করে , রজোগুণের চেয়ে সত্ত্বগুণ ভালো, এ নিয়ে মুক্তিতত্ত্ব-ব্যাখ্যায় তর্ক চলতে পারে ; কিন্তু সাহিত্যে সাহিত্যিক ভালো ছাড়া অন্য কোনো ভালো নেই । কাটা গাছে গোলাপ ফোটে, এটাতে বোধ করি রজোগুণের প্রমাণ হয় । গোলাপগাছের