পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S \38 রবীন্দ্র-রচনাবলী সুখ আজি মেঘমুক্ত দিন ; প্ৰসন্ন আকাশ হাসিছে বন্ধুর মতো ; সুমন্দ বাতাস মুখে চক্ষে বক্ষে আসি লাগিছে মধুর— অদৃশ্য অঞ্চল যেন সুপ্ত দিগবন্ধুর তরল কল্লোলে। অর্ধমগ্ন বালুচর রৌদ্র পোহাইছে শুয়ে। ভাঙা উচ্চতীর ; ঘনচ্ছায়াপূৰ্ণ তরু ; প্রচ্ছন্ন কুটির ; বক্র শীর্ণ পথখানি দূর গ্রাম হতে শস্যক্ষেত্র পার হয়ে নামিয়াছে স্রোতে তৃষার্ত জিহবার মতো । গ্রামবধূগণ অঞ্চল ভাসায়ে জলে আকণ্ঠমগন করিছে কৌতুকলাপ | উচ্চ মিষ্ট হাসি জলকলস্বরে মিশি পশিতেছে আসি কৰ্ণে মোর । বসি এক বাধা নৌকা-’পরি বৃদ্ধ জেলে গাথে জাল নতশির করি রৌদ্রে পিঠ দিয়া । উলঙ্গ বালক তার আনন্দে বঁ্যাপায়ে জলে পড়ে বারম্বার পদ্মা সহিতেছে তার স্নেহ-জ্বালাতন | তরী হতে সম্মুখেতে দেখি দুই পার— স্বচ্ছতম নীলাভ্রের নির্মল বিস্তার ; মধ্যাহন্ত-আলোকপ্লাবে জলে স্থলে বনে বিচিত্র বর্ণের রেখা ; আতপ্ত পবনে তীর উপবন হতে কীভূ আসে বহি বিহঙ্গের শ্রান্ত স্বর । আজি বাহিতেছে প্ৰাণে মোর শান্তিধারা- মনে হইতেছে সুখ অতি সহজ সরল, কাননের প্ৰস্ফুট ফুলের মতো, শিশু-আননের হাসির মতন, পরিব্যাপ্ত বিকশিতউন্মুখ অধরে ধরি চুম্বন-অমৃত চেয়ে আছে সকলের পানে বাক্যইন শৈশববিশ্বাসে চিররাত্রি চিরদিন ।