পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নীরবে গণনা করিতে লাগিল গৃহতলে খড়ি কষি । আঁকিতে লাগিল কত না চক্র, কত না রেখার জাল, গণনার শেষে কহিল “এখন হয়েছে। লগ্ন-কাল’ । আমিও উঠিয়া দাড়াইনু পাশে মন্ত্রচালিত-মতো । নারীগণ সবে ঘেরিয়া দাড়ালো একটি কথা না বলি দোহাকার মাথে ফুলদল-সাথে বরাষি লাজাঞ্জলি । পুরোহিত শুধু মন্ত্র পড়িল আশিস করিয়া দোহে— কী ভাষা কী কথা কিছু না বুঝিনু, দাড়ায়ে রহিনু মোহে। অজানিত বন্ধু নীরবে সঁপিল শিহরিয়া কলেবর হিমের মতন মোর করে তার তপ্ত কোমল কর । চলি গেল ধীরে বৃদ্ধ বিপ্ৰ, পশ্চাতে বাধি সার গেল নারীদল মাথায় কক্ষে মঙ্গল—উপচার । শুধু এক সখী দেখাইল পথ হাতে লয়ে দীপাখানি— মোরা দোহে। পিছে চলিনু তাহার, কারো মুখে নাহি বাণী । কত না। দীর্ঘ আঁধার কক্ষ সভায়ে হইয়া পার সহসা দেখি নু সমুখে কোথায় খুলে গেল এক দ্বার । নানা বরনের আলোক সেথায়, নানা বরনের ফুল । মণি বেদিকায় কুসুমাশয়ন স্বপ্নরচিত—মতো । পাদপীঠ—“পরে চরণ প্রসারি শয়নে বসিলা বন্ধু— আমি কহিলাম, “সব দেখিলাম, তোমারে দেখি নি। শুধু।” চারি দিক হতে বাজিয়া উঠিল। শত কৌতুকহাসি । শত ফোয়ারায় উছসিল যেন পরিহাস রাশি রাশি । সুধীরে রমণী দু-বাহু তুলিয়া, অবগুণ্ঠনখানি উঠায়ে ধরিয়া মধুর হাসিল মুখে না কহিয়া বাণী । চকিত নয়নে হেরি মুখপানে পড়িন চরণতলে, * এখানেও তুমি জীবনদেবতা !” কহিনু নয়নজলে । সেই মধুমুখ, সেই মৃদুহাসি, সেই সুধা ভরা আঁখি খেলা করিয়াছে নিশিদিন মোর সব সুখে সব দুখে, এ অজানাপুরে দেখা দিল পুন। সেই পরিচিত মুখে । অমল কোমল চরণকমলে চুমিনু বেদনাভারে— বাধা না মানিয়া ব্যাকুল অমশ্রন পড়িতে লাগিল ঝরে । অপরাপ তানে ব্যথা দিয়ে প্ৰাণে বাজিতে লাগিল। বঁশি । বিজন বিপুল ভবনে রমণী হাসিতে লাগিল হাসি। জোড়াসাকে । কলিকাতা ২০। ফায়ুন ১৩,০২