পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 2 ܐܰ) ܓ চন্দ্ৰকান্ত । (নিকটে আসিয়া) কথাটা বুঝলে না ভাই! কেবল রাগই করলে ! ওটা, শুদ্ধ অভিমানের কথা, আর কিছুই নয়। ভালোবাসা থাকলেই মানুষ অমন কথা বলে। আচ্ছা, তুমি আমার গা ছুয়ে বলো, তুমি ঘাটে পদ্মঠাকুরঝিকে বল নি—“আমার এমনি পোড়াকপাল যে বিয়ে করে ইস্তিক সুখ কাকে বলে একদিনের তরে জানলুম না।” আমি কি সে কথা শুনতে গিয়েছিলুম, না, শুনলে রাগ করতুম | ক্ষান্তমণি। আমি ককখনো পদ্মঠাকুরঝিকে ও কথা বলি নি। চন্দ্ৰকান্ত । আহা, পদ্মঠাকুরঝিকে না বলতে পাের, আর ঠিক ঐ কথাটিই না হতেও পারে, কিন্তু কাউকে কিছু বল নি ? আচ্ছা, আমার গা ছুয়ে বলো। ক্ষান্তমণি। তা আমি সৌরভীদিদিকে বলেছিলুম— চন্দ্ৰকান্ত । কী বলেছিলে। ক্ষান্তমণি। আমি বলেছিলুমচন্দ্ৰকান্ত । বলেই ফেলো-না ! দেখো, আমি রাগ করব না। ক্ষান্তমণি। আমার গায়ে গয়না দেখতে পায় না বলে সৌরভীদিদি দুঃখু করছিল, তাই আমি কথায় কথায় বলেছিলুম— গয়না কোথেকে হবে! হাতে যা থাকে বই কিনতে আর বই বাধাতেই সব যায়। তার যত শাখ সব বইয়েতেই মিটেছে। বউ না হয়ে বই হলে আদর বেশি পাওয়া যেত। তা আমি বলেছিলুম। চন্দ্ৰকান্ত । (গভীর মুখে) হাটে-ঘাটে যেখানে—সেখানে বলে বেড়াও তোমার স্বামী গরিব, তোমাকে একখানা গয়না দিতে পারে না— স্ত্রী ওরকম অপবাদ রাটিয়ে বেড়ানোর চেয়ে সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে যাওয়া ভালো । ক্ষান্তমণি । তোমার পায়ে পড়ি ওরকম করে বোলো না । আমার দোষ হয়েছিল মানছি— আমি আর কখনো এমন বলব না । চন্দ্ৰকান্ত। মুখে বল আর না বল মনে মনে আছে তো ! মনে মনে ভাব তো এই লক্ষ্মীছাড়াটার সঙ্গে বিয়ে হয়ে আমার গায়ে একখানা গয়না চড়ল না- তার চেয়ে যদি মুখুজেদের বড়ো ছেলে কেবলকৃষ্ণের সঙ্গে— ক্ষান্তমণি । (চন্দ্রের মুখ চাপা দিয়া) আমন কথা তুমি ঠাট্টা করেও বোলো না, আমার ভালো লাগে। না । আমার গয়নায় কাজ নেই— আমি জন্ম জন্ম শিবপুজো করেছিলাম। তাই তোমার মতো এমন স্বামী৷ পেয়েছি।-- চন্দ্ৰকান্ত । আচ্ছা, তা হলে আমার চাদরখানা দাও । ক্ষান্তমণি। (চাদর আনিয়া দিয়া) তুমি বাইরে বেরোচ্ছি। যদি চুলগুলো আমন ক্যাগের বাসার মতো করে বেরিয়ো না। একটু বোসো, তোমার চুল ঠিক করে দিই। (চিরুনি ব্ৰশ লইয়া আঁচডাইতে প্রবৃত্ত চন্দ্ৰকান্ত । হয়েছে, হয়েছে। ক্ষান্তমণি। না হয় নি— এক দণ্ড মাথাটা স্থির করে রাখো দেখি । চন্দ্ৰকান্ত। তোমার সামনে আমার মাথার ঠিক থাকে না, দেখতে দেখতে ঘুরে যায়— ক্ষান্তমণি। অত ঠাট্টায় কাজ কী। নাহয় আমার রূপ নেই, গুণ নেই— যে তোমার মাথা ঘোরাতে পারে এমন একটা খোজ করো গে— আমি চললুম। : [[চিরুনি ব্ৰশ ফেলিয়া দ্রুত প্ৰস্থান চন্দ্ৰকান্ত। এখন আর সময় নেই, ফিরে এসে রাগ ভাঙাতে হবে। ಙ್ಣಿরী । (নেপথ্য হইতে) ওহে ! আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে ? তোমাদের প্ৰেমাভিনয় সাঙ্গ হল চন্দ্ৰকান্ত। এইমাত্র পঞ্চমাঙ্কের যবনিকাপাতন হয়ে গেল। হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি ! [প্ৰস্থান