পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRVO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নিরীক্ষণ করে দেখছেন । কমলমুখী। তুই যে বললি বোসেন্দের বাড়ির নতুন জামাই এসেছে, তাই তো আমি ছুটে দেখতে এলুম। ইন্দুমতী। সত্যি কথাটা শুনলে আরো বেশি ছুটে আসতিস। যা দেখতে এসেছিলি তার চেয়ে ভালো জিনিস দেখিলি তো ভাই!! আর পরের বাড়ির জামাই দেখে কী হবে, এখন নিজের সন্ধান দেখি । কমলমুখী। তোর আবশ্যক হয়ে থাকে তুই দেখা। এখন আমার অন্য কাজ আছে। 3, চন্দ্ৰকান্ত । মশায়, অনুমতি হয় ? তো এখন আসি । নিবারণ। এত শীঘ্ৰ যাবেন ? বলেন কী। আর-একটু বসুন-না ! চন্দ্ৰকান্ত । আপনার এখনো নাওয়া-খাওয়া হয় নি— নিবারণ। সে এখনো ঢের সময় আছে। বেলা তো বেশি হয় নি— চন্দ্ৰকান্ত | আজ্ঞে বেলা নিতান্ত কম হয় নি- এখন যদি আজ্ঞা করেন তো উঠি— নিবারণ। তবে আসুন। দেখুন চন্দরবাবু, মতি হালদারের ঐ যে “কুসুমকানন” না। কী বইখানা বললেন ওটা লিখে দিয়ে যাবেন তো— চন্দ্ৰকান্ত। “কাননকুসুমিকা” ? বইখানা পাঠিয়ে দেব। কিন্তু সেটা মতি হালদারের নয়— নিবারণ। তবে থােক। বরঞ্চ বিনোদবাবুর একখানা। “প্ৰবোধলহরী।” যদি থাকে তো একবার— চন্দ্ৰকান্ত। “প্ৰবোধলহরী” তো বিনোদবাবুরবিনোদবিহারী । আঃ থামো-না ! তা, যে আজ্ঞে, আমিই পাঠিয়ে দেব ! আমার প্রবোধলহরী, বারবেলাকথন, তিথিদোষখণ্ডন, প্ৰায়শ্চিত্তবিধি, এবং নূতন পঞ্জিকা আপনাকে পাঠিয়ে দেব— আজি তবে আসি । ४थुg|- নিবারণ। নাঃ লোকটার বিদ্যে আছে। বাচা গেল, একটি মনের মতো সৎপাত্র পাওয়া গেল । কমলের জন্যে আমার বড়ো ভাবনা ছিল । ইন্দুমতীর ইন্দুমতী । বাবা, তোমার হল ? প্ৰবেশ নিবারণ। ও ইন্দু, তুই তো দেখলি নে— তোরা সেই যে বিনোদবাবুর লেখার এত প্রশংসা করিস তিনি আজ এসেছিলেন । ইন্দুমতী। আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তোমার এখানে যত রাজ্যির অকেজো লোক এসে জোটে আর আমি আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের দেখি! আচ্ছা বাবা, চন্দ্রবাবু বিনোদবাবু ছাড়া আর যে একটি লোক এসেছিল–– বদচেহারা লক্ষ্মীছাড়ার মতো দেখতে, সে কে । নিবারণ। তবে তুই যে বলছিলি আড়াল থেকে দেখিস নে ? বাদ চেহারা আবার কার দেখলি । বাবুটি তো দিব্যি বেশ ফুটফুটে কার্তিকটির মতো দেখতে। তার নামটি কী জিজ্ঞাসা করা হয় নি। ইন্দুমতী। তাকে আবার ভালো দেখতে হল ? দিনে দিনে তোমার কী যে পছন্দ হচ্ছে বাবা | এখন নাইতে চলো । [নিবারণের প্রস্থান না, সত্যি, দেখে চােখ জুড়িয়ে যায়। যদি কার্তিককে এর মতন দেখতে হয় তা হলে কার্তিককে ভালো দেখতে, বলতে হবে। মুখে একটি কথা ছিল না, কিন্তু কেমন বসে বসে সব দেখছিল। আর মজা করে মুখ টিপে টিপে হাসছিল— না। সত্যি, বেশ হাসিখানি । বাবা যেমন, একবার জিজ্ঞাসাও করলেন না তার নাম কী, বাড়ি কোথায়। আর কোথা থেকে যত সব নিমাই নেপাল নিলু। জুটিয়ে নিয়ে আসেন। বাবা যখন মতি হালদারের সঙ্গে বিনোদবাবুর তুলনা করছিলেন তখন সে বিনোদবাবুর মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে কেমন হাসছিল! আর, বাবা যখন বিনোদবাবুর ছেলের কথা জিজ্ঞাসা