পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こ じbr রবীন্দ্র-রচনাবলী জো নেই। এক-একদিন বড়ো আবশ্যকের সময় গাড়িভাড়া করে বন্ধুদের বাড়ি-বাড়ি খোজ করে বেড়ান। ইন্দুমতী।। এক কাজ করে—না ভাই। কাউকে দিয়ে বন্ধুদের গাল দিয়ে কতকগুলো চিঠি লেখাও-না— সেগুলো বইয়ের মধ্যে গোজা থাকবে- বন্ধুরা যখন বই ধার করে পড়বেন নিজেদের সম্বন্ধে অনেক জ্ঞানলাভ করবেন, এবং সেই সুযোগে দুটি-পাচটি ঝরে যেতেও পারেন। ক্ষান্তমণি।। আঃ, তা হলে তো হাড় জুড়োয় । ইন্দুমতী । এ-সব কী ? কতকগুলো লেখা, কতকগুলো প্রাফ, খালি দেশলাইয়ের বাক্স, কাননকুসুমিকা, কাগজের পুঁটুলির মধ্যে ছাতাধরা মসলা, একখানা তোয়ালে, গোটাকতক দাবার খুঁটি, একটি ইস্কাবনের গোলাম, ছাতার বাট- এ চাবির গোচ্ছা ফেলে দিলে বোধ হয় চলবে না ক্ষান্তমণি । এই দেখো ! এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব আছে। আজ সকালে একবার খোজ পড়েছিল, কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেষে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন। দাও তো ভাই, এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না। ঐ ভাই, ওরা আসছে— চলো ও—ঘরে পালাই। | 22 বিনোদ চন্দ্ৰকান্ত নিমাই নলিনাক্ষ শ্ৰীপতি ও ভূপতির প্রবেশ বিনোদবিহারী । ( টোপর পরিয়া ) সাঙ তো সাজিলুম, এখন তোমরা পাচজনে মিলে হাততালি দাও— উৎসাহ হোক, নইলে থেকে থেকে মনটা দমে যাচ্ছে। চন্দ্ৰকান্ত । এখন তো কেবল নেপথ্যবিধান চলছে, আগে অভিনয় আরম্ভ হােক। তার পরে দাও দেখি । চন্দ্ৰকান্ত। মহারানীর বিদূষক সাজতে হবে। আর কী। যাতে তিনি একটু প্ৰফুল্ল থাকেন আজ রাত্রি থেকে এই তোমার একমাত্র কাজ হল । বিনোদবিহারী। তা সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে। এই টােপরটা দেখলে মনে পড়ে সেকেলে ইংরেজ রাজাদের যে “ফুল”গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই আকারের। চন্দ্ৰকান্ত। সেজের বাতি নিবিয়ে দেবার ঠোঙাগুলোরও ঐরকম চেহারা। এই পঁচিশটা বৎসর যা-কিছু শিক্ষাদীক্ষা হয়েছে, যা-কিছু আশা-আকাঙক্ষা জন্মেছিল— ভারতের ঐক্য, বাণিজ্যের উন্নতি , সমাজের সংস্কার, সাহেবের ছেলে পিটােনো প্রভৃতি যে-সকল উচু নিচু ভাবের পলতে মগজের ঘি খেয়ে খুব উজ্জ্বল হয়ে জুলে উঠেছিল— সেগুলিকে ঐ টােপরটা চাপা দিয়ে এক দমে নিবিয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হয়ে বসতে হবে নলিনাক্ষ। আর আমাদেরও মনে থাকবে না— একেবারে ভুলে যাবে— দেখা করতে এলে বলবে সময় নেই চন্দ্ৰকান্ত। কিংবা মহারানীর হুকুম নেই। কিন্তু সেটা তোমার ভারি ভুল। বন্ধুত্ব তখন আরো প্রগাঢ় হয়ে উঠবে। ওর জীবনের মধ্যাহ্নসূর্যটি যখন ঠিক ব্ৰহ্মরন্ধের উপর ঝাঁ ঝা করতে থাকবেন। তখন এই কালো কালো ছায়াগুলিকে নিতান্ত খারাপ লাগবে না । কিন্তু দেখ বিনোদ, কিছু মনে করিস নে— আরম্ভেতে একটুখানি দমিয়ে দেওয়া ভালো— তা হলে আসল ধাক্কা সামলাবার বেলায় নিতান্ত অসহ্য বোধ হবে না । তখন মনে হবে, চন্দর যতটা ভয় দেখাত আসলে ততটা কিছু নয় । সে বলেছিল আগুনে ঝলসাবার কথা কিন্তু এ তো কেবলমাত্র উলটে-পালটে তাওয়ায় সেঁকা— তখন কী অনির্বচনীয় আরাম বোধ হবে । শ্ৰীপতি। চন্দরদী, ও কী তুমি বকিছ! আজি বিয়ের দিনে কি ও—সব কথা শোভা পায়! একে তো