পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ Գ 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় অঙ্ক প্রথম দৃশ্য বাগবাজারের রাস্তা নিমাই। আহা, এই বাড়িটা আমার শরীর থেকে আমার মনটুকুকে যেন শুষে নিচ্ছে— ব্লটিং যেমন কাগজ থেকে কালি শুষে নেয়। কিন্তু কোন দিকে সে থাকে এ পর্যন্ত কিছুই সন্ধান করতে পারলুম না। ঐ যে পশ্চিমের জানলার ভিতর দিয়ে একটা সাদা কাপড়ের মতো যেন দেখা গেল-না না, ও তো নয়, ও তো একজন দাসী দেখছি— ও কী করছে। একটা ভিজে শাড়ি শুকোতে দিচ্ছে। বোধ হয় তারই শাড়ি। আহা, নাগাল পেলে একবার স্পর্শ করে নিতুম। তা হলে এতক্ষণে তার স্নান হল। পিঠের উপরে ভিজে চুল ফেলে সাফ কাপড়টি পরে এখন কী করছেন। একবার কিছুতেই কি দেখা হতে পারে না। আমরা কি বনের জন্তু। আমাদের কেন এত ভয় । এত করে এতগুলো দেয়াল গেঁথে এতগুলো দরজা-জানলা বন্ধ করে মানুষের কাছ থেকে মানুষ লুকিয়ে থাকে কেন। শিবচরণ। ( বেহারিার প্রতি) আরো রাখা রাখা। ( পালকি হইতে অবতরণ ) বেটার তবু ইহঁশ নেই! দেখো-না, হী করে দাড়িয়ে আছে দেখো-না ! যেন খিদে পেয়েছে, এই বাড়ির ইটকাঠগুলো গিলে খাবে ! ছোড়ার হল কী । খাচার পাখির দিকে বেড়াল যেমন তাকিয়ে থাকে তেমনি করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। রোসো, এবারে ওকে জব্দ করছি— বাবাজি হাতে হাতে ধরা পড়েছেন। হতভাগা কলেজে যাবার নাম করে রোজ বাগবাজারে এসে ঘুর-ঘুর করে। ( নিকটে আসিয়া ) বাপু, মেডিকেল কলেজটা কোন দিকে একবার দেখিয়ে দাও দেখি । নিমাই। কী সৰ্ব্বনাশ ! এ—যে বাবা ! শিবচরণ। শুনিছ ? কালেজ কোন দিকে ! তোমার অ্যানাটমির নোট কি ঐ দেয়ালের গায়ে লেখা আছে। তোমার সমস্ত ডাক্তারি শাস্ত্র কি ঐ জানলায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। ( নিমাই নিরুত্তর ) মুখে কথা নেই যে ! লক্ষ্মীছাড়া, এই তোর একজামিন ! এইখানে তোর মেডিকেল কলেজ ! নিমাই। খেয়েই কলেজে গেলে আমার অসুখ করে, তাই একটুখানি বেড়িয়ে নিয়ে— শিবচরণ। বাগবাজারে তুমি হাওয়া খেতে এস ? শহরের আর-কোথাও বিশুদ্ধ বায়ু নেই! এ তোমার দাৰ্জিলিং সিমলে পাহাড় ! বাগবাজারের হাওয়া খেয়ে খেয়ে আজকাল যে চেহারা বেরিয়েছে একবার আয়নাতে দেখা হয় কি। আমি বলি ছোড়াটা একজামিনের তাড়াতেই শুকিয়ে যাচ্ছে— তোমাকে যে ভুতে তাড়া করে বাগবাজারে ঘোরাচ্ছে তা তো জানতুম না ! নিমাই। আজকাল বেশি পড়তে হয় বলে রোজ খানিকটা করে একসেসাইজ করে নিইশিবচরণ। রাস্তার ধারে কাঠের পুতুলের মতো হা করে দাড়িয়ে থেকে তোমার একসেসাইজ হয়, বাড়িতে তোমার দাড়াবার জায়গা নেই! নিমাই। অনেকটা চলে এসে শ্ৰান্ত হয়েছিলুম তাই একটু বিশ্রাম করা যাচ্ছিল। তেব শিবচরণ। শ্ৰান্ত হয়েছিস, তবে ওঠ আমার পালকিতে। যা এখনি কলেজ যা। গোরস্তর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে শ্রান্তি দূর করতে হবে না। নিমাই । সে কী কথা ! আপনি কী করে যাবেন। শিবচরণ। আমি যেমন করে হােক যাব, তুই এখন পালকিতে ওঠ। ওঠ বলছি । নিমাই। অনেকটা জিরিয়ে নিয়েছি- এখন আমি অনায়াসে হেঁটে যেতে পারব |