পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\©(፩ S a রবীন্দ্র-রচনাবলী বৈকুণ্ঠ। হা হা হা হাঃ! আপনি বড়ো সুন্দর রস দিয়ে কথা বলতে পারেন— বা বা, আপনার চমৎকার ক্ষমতা ! তিনকড়ি। কথায় মত্ত হয়ে প্ৰতিজ্ঞে ভুলবেন না। বৈকুণ্ঠবাবু। খিদে ক্রমেই বাড়ছে। বৈকুণ্ঠ। বটে বটে ! ঈশেন ! ঈশোন! একবার এই দিকে শুনে যাও তো ঈশেন! ঈশানের প্রবেশ ঈশান। একটি ছিল, দুটি জুটেছে! তিনকড়ি। রেগো না দাদা, তোমাকেও ভাগ দেব। ঈশান। এখনো লেখা শোনানো চলছে বুঝি ! বৈকুণ্ঠ । ( লজ্জিতভাবে খাতা আড়াল করিয়া ) না না, লেখা, কোথায় ? দেখো, ঈশেন, ইয়ে হয়েছে- এই দুটি বাবু, বুঝেছি, এদের জন্যে কিছু খাবার এনে দিতে হচ্ছে। ঈশান। খাবার এখন কোথায় জোগাড় করব । তিনকড়ি। ও বাবা ! বৈকুণ্ঠ। ঈশেন, বুঝেছি, তুমি একবার বাড়ির মধ্যে গিয়ে আমার মাকে বলে এসো গে যে— ঈশান। সে হবে না। বাবু, দিদিঠাকরুনকে আমি আবার এই দিবসান্তে বেড়ি ধরাতে পারব না- তিনি তোমার ভাত কোলে নিয়ে সেই অবধি বসে আছেন— বৈকুণ্ঠ। তা, এদের না খাইয়ে তো আমি খেতে পারব না, তুমি একবার মাকে বললেই— ঈশান। তা জানি, তাকে বললেই তিনি ছুটে যাবেন, কিন্তু আজ সমস্ত দিন একাদশী করে আছেন। বাবু, আজকের মতো তোমরা ঘরে গিয়ে খাও গে । তিনকড়ি। দাদা, পরামর্শ দেওয়া সহজ, কিন্তু খাবার না থাকলে কী করে খাওয়া যায় সে সমিস্যে তো। কেউ মেটাতে পারলে না। কেদার। তিনকড়ে, থাম। বৈকুণ্ঠবাবু, ব্যস্ত হবেন না, ওর নাম কী, আজ থাকি-না- বৈকুণ্ঠ। দেখা ঈশেন, তোর জ্বালায় কি আমি বাড়িঘরদোর ছেড়ে বনে গিয়ে পালাব! বাড়িতে দু জন ভদ্রলোক এলে তাদের দু-মুঠো খেতে দিবি নে ! হারামজাদা লক্ষ্মীছাড়া বেটা ! বোরো তুই আমার ঘর থেকে- [ঈশানের প্রস্থান তিনকড়ি। আহা, রাগ করবেন না। আমি ঠাউরেছিলুম খাওয়াতে আপনার কোনো অসুবিধে নেই, ঠিক বুঝতে পারি নি, একটু অসুবিধে আছে বৈকি! এ লোকটিকে ইতিপূর্বে দেখি নি— তা ছাড়া আপনার বুড়ো মা বৈকুণ্ঠ। না না, সেটি আমার একমাত্র বিধবা মেয়ে, আমার নীরু, আমার মা নেই। তিনকড়ি । মা নেই! ঠিক আমারই মতো । কেদার। বৈকুণ্ঠবাবু, ওর নাম কী, আজ তবে উঠি— ঈশানকোণে ঝড়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তিনকড়ি। দাড়াও না, যাবে কোথায় ? দেখুন বৈকুণ্ঠবাবু, লজ্জা পাবেন না- এই তিনকড়ের পোড়াকপালের আঁচ পেলে অন্নপূর্ণর হাড়ির তলা দু-ফাকি হয়ে যায়। যা হােক, আমার উপর সম্পূর্ণ ভার দিন, আমি বড়োবাজার থেকে আহারের জোগাড় করে আনছি। আপনাকে আর কিছু দেখতে হবে না । কেদার। ( কৃত্রিম রোষে) দেখা তিনকড়ি ! এতদিন, ওর নাম কী, আমার সহবাসে এবং দৃষ্টান্তে তোর এই, কী বলে, হেয় জঘন্য লুব্ধ প্রবৃত্তি ঘুচল না! আজ থেকে, ওর নাম কী, তোর মুখদর্শন করব की । [প্ৰস্থান বৈকুণ্ঠ। আহা, আহা, রাগ করে যাবেন না কেদারবাবু- কেদারবাবু, শুনে যান। তিনকড়ি। কিছু ভাববেন না। কেদারন্দাকে আমি বেশ জানি। ওকে আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে