পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) @ 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তোর এক গাছ-পোতা বাতিক হয়েছে। দিনরাত যত রাজ্যের উড়েমালী নিয়ে কারবার! কত মিথো গাছের নাম করে কত লোক যে তোমাকে ঠকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার আর সংখ্যে করা যায় না। অবু, তুই বিয়েথাওয়া করবি নে ? অবিনাশ । তার চেয়ে অন্য বাতিকগুলো যে ভালো। বয়স প্ৰায় চল্লিশ হল, আর কেন ? বৈকুণ্ঠ। সে কী, এরই মধ্যে চল্লিশ ? অবিনাশ। এরই মধ্যে আর কই ? ঠিক পুরো সময়ই লেগেছে— যেমন অন্য লোকের হয়ে থাকে । বৈকুণ্ঠ। আমারই অন্যায় হয়েছে! ছি:৷ ছি, লোকে স্বার্থপর বলবে। আর দেরি করা নয়। অবিনাশ। একটি লোক বসে আছে, আমি তবে চললুম। [প্ৰস্থান বৈকুণ্ঠ। নিশ্চয় সেই মানিকতলার মালী। একেই বলে বাতিক। কেদারের প্রবেশ বৈকুণ্ঠ। এই যে কেদারবাবু ফিরে এসেছেন— বড়ো খুশি হলুম- তা হলে— কেদার। দেখুন, ওর নাম কী, আপনার লাইব্রেরিতে সকল রকম সংগীতের বই আছে, কিন্তু, কী বলে, চীনেদের সংগীতপুস্তক বোধ করি নেই। বৈকুণ্ঠ। (ব্যস্ত হইয়া) আজ্ঞে না। আপনি কোথাও সন্ধান পেয়েছেন ? কেদার। একখানি জোগাড় করে এনেছি, আপনাকে উপহার দিতে চাই। বইখানি, ওর নাম কী, বহুমূল্য। এই দেখুন। (স্বগত) বেটা চীনেম্যানের কাছ থেকে তার পুরানো জুতোর হিসাব চেয়ে এনেছি। বৈকুণ্ঠ। তাই তো। এ যে আদিত চীনে ভাষা দেখছি। কিছু বোঝবার জো নেই। আশ্চর্য! একেবারে সোজা অক্ষর ! বা, বা, চমৎকার! তা এর দাম কেদার। মাপ করবেন, ওর নাম কী৷— বৈকুণ্ঠ। না, সে হবে না! আপনি যে কষ্ট করে বইখানি খুঁজে এনেছেন এতেই আমি আপনার কেনা হয়ে রইলুম, আমার ঋণ আর বাড়াবেন না! কেদার। ( নিশ্বাস ফেলিয়া ) কিন্তু কী বলব, দামটা— বোধ হয় ঠিকেছি। বৈকুণ্ঠ। আজ্ঞে না, তা কখনো হতেই পারে না। আমি জানি। কিনা, এ-সব জিনিসের দাম বেশি। কেদার। আজ্ঞে, বেটা-পয়ত্ৰিশ টাকা চেয়ে বসেছে, বোধ করি, ওর নাম কী, ত্ৰিশেই রফা হবে। বৈকুণ্ঠ। পয়ত্ৰিশ ! এ তো জলের দর! টাকাটা এখনই দিয়ে দিন- আবার যদি মত বদলায়। চীনেম্যান বোধ হয় নিতান্ত দায়ে পড়েছে। কেদার। দায় বলে দায়! শুনলুম দেশে তার তিন শ্যালী আছে, তিনটিকেই এক কুলীন তুলনাই হয় না। বৈকুণ্ঠ। (হাসিয়া ) বলা কী কেদারবাবু! কেদার। সাধে বলি! ভুক্তিভোগীর কথা। ওর নাম কী, শ্বশুরবাড়িতে শ্যালী অতি উত্তম জিনিস— আমন জিনিস আর হয় না— কিন্তু সেখান থেকে চু্যত হয়ে হঠাৎ স্কন্ধের উপর এসে পড়লে, ওর নাম কী, সকলে সামলাতে পারে না। বৈকুণ্ঠ। সামলাতে পারে না! হা হা, হা হা! কেদার। আজ্ঞে, আমি তো পারছি নে! একে শ্যালী তাতে নিখুঁত সুন্দরী, তাতে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছেন, ওর নাম কী, ঘরে তো আর টেকা যায় না! চোখ মেলে চাইলে স্ত্রী ভাবে শ্যালীকে খুঁজছি, ওর নাম কী, চোখ বুজে থাকলে স্ত্রী ভাবে আমি শ্যালীর ধ্যান করছি। কাশলে মনে করে কাশির মধ্যে একটি অর্থ আছে, আবার কী বলে ভালো, প্ৰাণপণে কাশি চেপে থাকলে মনে করে তার অর্থ আরো সন্দেহজনক ।