পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের খাতা VVS এ তো বড়ো মুশকিলেই পড়া গেল দেখছি।- দোষ কী জানেন অবিনাশবাবু, ও ভাবতে গেলেই দোষ, না ভাবলে কিছুতেই দোষ নেই, আমি তো এই বুঝি। অবিনাশ। ওঃ, বুঝেছি—তুমি বলছি, আগে থাকতে ঐ প্ৰেয়সী সম্বোধনটায় লোকে কিছু মনে VikGN 5 *iGk তিনকড়ি। বাচা গেল !- হঁহা, তাই বটে। কিন্তু কী জানেন, আপনা-আপনির মধ্যে নাহয় তাকে প্ৰেয়সীই বললেন!! তা কি আর অন্য কেউ বলে না! ঐটেই লিখে ফেলুন। অবিনাশ। কােজ নেই, গোড়ায় যেটা ছিল সেইটেইতিনকড়ি। সেইটেই তো আমার পছন্দঅবিনাশ। কিন্তু একটু ভেবে দেখো-না, ওটা যেন— তিনকড়ি। ও বাবা! আবার ভাবতে বলে!— দেখো অবিনাশবাবু, শিশুকাল থেকে আমিও কারও জন্যে ভাবি নি, আমার জন্যেও কেউ ভাবে নি, ওটা আমার আর অভ্যাস হলই না। এরকম আরো আমার অনেকগুলি শিক্ষার দোষ আছে অবিনাশ।। আঃ, তিনকড়ি, তুমি একটু থামলে বাচি। নিজের কথা নিয়েই কেবল বকবক করে মরছ, আমাকে একটু ভাবতে দাও দেখি। তিনকড়ি। আপনি ভাবুন-না। আমাকে ভাবতে বলেন কেন ? একটু বসুন অবিনাশবাবু, আমি কেদারন্দাকে ডেকে আনি । সে আমার চেয়ে ভাবতেও জানে, ভেবে কিনারা করতেও পারে।- আমার পক্ষে বুড়োই ভালো। [প্ৰস্থান কেদার বৈকুণ্ঠ ও তিনকড়ির প্রবেশ বৈকুণ্ঠ। অবিনাশ, কেদারবাবুকে আবার তোমার কী দরকার হল। আমি ওঁকে আমার নূতন পরিচ্ছেদটা শোনাচ্ছিলুম-তিনকড়ি কিছুতেই ছাড়লে না, শেষকালে হাতে পায়ে ধরতে লাগল। অবিনাশ । আমার সেই কাজটা শেষ হয় নি, তাই। বৈকুণ্ঠ। (রাগিয়া ) তোমার তো কাজ শেষ হয় নি, আমারই সে পরিচ্ছেদটা শেষ হয়েছিল না। কি ? অবিনাশ। তা, দাদা, ওঁকে নিয়ে যাও-না— কেদার। ( ব্যস্ত হইয়া) ওর নাম কী, অবিনাশ, তোমারও সে কাজটা তো জরুরি, কী বলে, আর তো দেরি করা চলে না । বৈকুণ্ঠ। বিলক্ষণ ! আপনি সেজন্যে ভাববেন না।— নিজের কাজ নিয়ে কেদারবাবুকে এরকম কষ্ট দেওয়া উচিত হয় না। অবিনাশ। অমন করলে উনি আর এখানে আসবেন না। তিনকড়ি। সে ভয় করবেন না। বৈকুণ্ঠবাবু— আমাদের দুটিকে না চাইলেও পাওয়া যায়, তাড়ালেও ফিরে পাবেন- ম'লেও ফিরে আসব। এমনি সকলে সন্দেহ করে। কেদার। তিনকড়ে ! ফের ! তিনকড়ি। ভাই, আগে থাকতে বলে রাখাই ভালো- শেষকালে ওঁয়ারা কী মনে করবেন। ঈশানের প্রবেশ ঈশান। (অবিনাশ ও কেদারের প্রতি ) বাবু, তোমাদের দু-জনেরই খাবার জায়গা হয়েছে। তিনকড়ি। আর আমাকে বুঝি ফাকি !— জন্মাবামাত্র যার নিজের মা ফাকি দিয়ে ম’ল, বন্ধুরা তার আর কী করবে !- কিন্তু দাদা, তিনকড়ে তোমাকে ভাগ না দিয়ে খায় না। : কেদার। তিনকড়ে ! ফের! তিনকড়ি। তা, যা ভাই, চট করে খেয়ে আয় গে। দেরি করলে বডড লোভ হবে। মনে হবে ছত্রিশ ব্যঞ্জন লুঠছিস ।