পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের খাতা VVVS) বৈকুণ্ঠ। তা দেখেছি- বড়ো মিশুক— হয় গান নয় গল্প করছেনই—— তা আমি তার কথা মন দিয়ে শুনে থাকি।- কিন্তু দেখো কেদারবাবু, কিছু মনে কোরো না ভাই- একটা বড়ো গুরুতর বেদনা পেয়েছি, সে কথা তোমাকে না বলে থাকতে পারছি নে। ভাই, আমার সেই স্বর্যসূত্রসার পুঁথিখানি কে নিয়েছে। কেদার। কোথায় ছিল বলুন দেখি। বৈকুণ্ঠ। সে তো আপনি জানেন। এই ঘরে ঐ শেলফের উপর ছিল। আজকাল এ ঘরে সর্বদা লোক আনাগোনা করছেন, আমি কাউকে কিছুই বলতে পারছি নে— কিন্তু শেলফের ঐ জায়গাটা শূন্য দেখছি আর মনে হচ্ছে আমার বুকের কখানা পাজার খালি হয়ে গেছে। কেদার। তবে আপনাকে, ওর নাম কী, খুলে বলি, অবিনাশ আপনার লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে যায় । বৈকুণ্ঠ। অবু! সে তো এ-সব বই পড়ে না। কেদার। পড়ে না, ওর নাম কী, বিক্রি করে। বৈকুণ্ঠ। বিক্রি করে ! . কেদার। নতুন প্রণয়— নতুন শাখ— ওর নাম কী, খরচ বেশি। আমি তাকে বলি আবু, কী বলে ভালো, মাইনের টাকা থেকে কিছু কিছু কেটে নিয়ে দাদাকে দিলেই হয়। অবু বলে, লজা করে। বৈকুণ্ঠ। ছেলেমানুষ ! প্ৰণয়ের খাতিরও এড়াতে পারে না, আবার দাদার সম্মানটিও রাখতে হবে। কেদার। ওর নাম কী, আমি আপনার বইখানি উদ্ধার করে আনব—- বৈকুণ্ঠ। তা, যত টাকা লাগে— আপনার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে থাকব। কেদার। (স্বগত) বাজারে তো তার চার পয়সা দামও হল না, এ আরো হল ভালো- ধর্মও রইল। কিছু পাওয়াও গেল। অবিনাশের প্রবেশ |의정F অবিনাশ । দাদা ! বৈকুণ্ঠ। কী ভাই আবু! অবিনাশ। আমার কিছু টাকার দরকার হয়েছে— বৈকুণ্ঠ। তাতে লজ্জা কী আবু! আমি বলছি কী, এখন থেকে তোমার টাকা তুমিই রাখে-না ভাই— আমি বুড়ো হয়ে গেলুম, হারিয়েই ফেলি কি ভুলেই যাই, আমার কি মনের ঠিক আছে। অবিনাশ। এ আবার কী নতুন কথা হল দাদা ! বৈকুণ্ঠ। নতুন কথা নয়। ভাই। তুমি বিয়েথাওয়া করে সংসারী হয়েছ, আমি তো সন্ন্যাসী মানুষঅবিনাশ। তুমিই তো, দাদা, আমার বিয়ে দিয়ে দিলে— তাতেই যদি পর হয়ে থাকি, তবে থাক, টাকাকড়ির কথা আর আমি বলব না। [প্ৰস্থান বৈকুণ্ঠ। আহা, অবু, রাগ কোরো না। শোনো আমার কথাটা, আহা শুনে যাও— বিপিনের প্রবেশ বৈকুণ্ঠ। এই—যে বেণীবাবুবিপিন। আমার নাম বিপিনবিহারী। বৈকুণ্ঠ। হা হা, বিপিনবাবু! আপনার বিছানায় ঐ-যে বইগুলি রেখেছেন। ওগুলি পড়ছেন বুঝি ? বিপিন । নাঃ, পড়ি নে, বাজাই। বৈকুণ্ঠ। বাজান ? তা আপনাকে যদি বায়া তবলা কি মৃদঙ্গবিপিন। সে তো আমার আসে না, আমি বই বাজাই। দেখুন বৈকুণ্ঠবাবু, আপনাকে রোজ বলব