পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Ծ) Գ Եր রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বিহারী কহিল, “সে কথা বলিতে পারি না। কাকীর বোনবিকে দেখিতে গিয়া পছন্দ হইল না বলা আমার মুখ দিয়া আসিবে না।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “সে তো উত্তম কথা।” বিহারী কহিল, “কিন্তু তোমার পক্ষে অন্যায় কাজ হইয়াছে মহিনদা। নিজেকে হালকা রাখিয়া পরের স্কন্ধে এরূপ ভার চাপানো তোমার উচিত হয় নাই। এখন কাকীর মনে আঘাত দেওয়া আমার পক্ষে বড়োই কঠিন হইবে।” মহেন্দ্র একটু লজ্জিত ও রুষ্ট হইয়া কহিল, “তবে কী করিতে চাও।” বিহারী কহিল, “যখন তুমি আমার নাম করিয়া তঁহাকে আশা দিয়াছ, তখন আমি বিবাহ করিব— দেখিতে যাইবার ভেড়ং করিবার দরকার নাই।” অন্নপূর্ণাকে বিহারী দেবীর মতো ভক্তি করিত। অবশেষে অন্নপূর্ণ বিহারীকে নিজে ডাকিয়া কহিলেন, “সে কি হয় বাছা। না দেখিয়া বিবাহ কুরিত্রে কিছুতেই হইবে না। যদি পছন্দ না হয়, তবে বিবাহে সৰ্ম্মত দিতে পারবে না, এই আমার 하게 ן" এবং ঢাকাই ধুতিটা বাহির করিয়া দাও।” মা কহিলেন, “কেন, কোথায় যাবি।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “দরকার আছে মা, তুমি দাও-না, আমি পরে বলিব।” মহেন্দ্র একটু সাজ না করিয়া থাকিতে পারিল না। পরের জন্য হইলেও কন্যা দেখিবার প্রসঙ্গমাত্রেই যৌবনধর্ম। আপনি চুলটা একটু ফিরাইয়া লয়, চাদরে কিছু গন্ধ ঢালে। দুই বন্ধু কন্যা দেখিতে বাহির হইল। কন্যার জেঠা শ্যামবাজারের অনুকূলবাবু— নিজের উপার্জিত ধনের দ্বারায় তাহার বাগানসমেত তিনতলা বাড়িটাকে পাড়ার মাথার উপর তুলিয়াছেন। মাসি অন্নপূর্ণা বলিয়াছিলেন, “আমার কাছে থাক।” তাহাতে ব্যয়লাঘবের সুবিধা ছিল বটে, কিন্তু গৌরবলাঘবের ভয়ে অনুকুল রাজি হইলেন না। এমন-কি, দেখাসাক্ষাৎ করিবার জন্যও কন্যাকে কখনো মাসির বাড়ি পাঠাইতেন না, নিজেদের মর্যাদা সম্বন্ধে তিনি এতই কড়া ছিলেন। ভাবনা যস্য সিদ্ধিৰ্ভবতি তাদৃশী’ কথাটা খাটে না। ভাবনার সঙ্গে খরচও চাই। কিন্তু পণের কথা উঠিলেই অনুকুল বলেন, “আমার তো নিজের মেয়ে আছে, আমি একা আর কত পারিয়া উঠিব।” এমনি করিয়া দিন বহিয়া যাইতেছিল। এমন সময় সাজিয়া-গুজিয়া গন্ধ মাখিয়া রঙ্গভূমিতে বন্ধুকে । লইয়া মহেন্দ্ৰ প্ৰবেশ করিলেন। তখন চৈত্রমাসের দিবসান্তে সূর্য অস্তোন্মুখ। দোতলার দক্ষিণবারান্দায় চিত্ৰিত চিক্কণ চীনের টালি গাথা ; তাহারই প্রান্তে দুই অভ্যাগতের জন্য রুপার রেকবি ফলমূলমিষ্টান্নে শোভমান এবং বরফজলপূর্ণ রুপার গ্লাস শীতল শিশিরবিন্দুজালে মণ্ডিত। মহেন্দ্ৰ বিহারীকে লইয়া আলজ্জিতভাবে খাইতে বসিয়াছেন। নীচে বাগানে মালী তখন ঝারিতে করিয়া গাছে গাছে জল দিতেছিল; সেই সিক্ত মৃত্তিকার স্নিগ্ধ গন্ধ বহন করিয়া চৈত্রের দক্ষিণ বাতাস মহেন্দ্রের শুভ্ৰ কুঞ্চিত সুবাসিত চাদরের প্রান্তকে দুৰ্দাম করিয়া তুলিতেছিল। আশপাশের দ্বার-জানালার ছিদ্রান্তরাল হইতে একটু-আধটু চাপা হাসি, ফিসফিস কথা, দুটা-একটা গহনার টুংটাং যেন শুনা যায়। আহারের পর অনুকুলবাবু ভিতরের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “চুনি, পান নিয়ে আয় তো রে।” কিছুক্ষণ পরে সংকোচের ভাবে পশ্চাতের একটা দরজা খুলিয়া গেল এবং একটি বালিকা কোথা