পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vobro রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন মুহুর্তের মধ্যে আত্মসংবরণ করিয়া অনুতপ্ত মহেন্দ্ৰ কহিল, “মা, আমার খাবার এইখানেই আনে ৷” মা কহিলেন, “ক্ষুধা না থাকে তো দরকার কী!” এই লইয়া ছেলেতে মায়েতে কিয়ৎক্ষণ মান-অভিমানের পর মহেন্দ্ৰকে পুনশ্চ আহারে বসিতে হইল । WO) রাত্ৰে মহেন্দ্রের ভালো নিদ্রা হইল না। প্ৰত্যুষেই সে বিহারীর বাসায় আসিয়া উপস্থিত। কহিল, “ভাই, ভাবিয়া দেখিলাম, কাকীমার মনোগত ইচ্ছা আমিই র্তাহার বোনঝিকে বিবাহ করি।” বিহারী কহিল, “সেজন্য তো হঠাৎ নৃতন করিয়া ভাবিবার কোনো দরকার ছিল না। তিনি তো ইচ্ছা নানাপ্রকারেই ব্যক্ত করিয়াছেন।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “তাই বলিতেছি, আমার মনে হয়, আশাকে আমি বিবাহ না করিলে তাহার মনে একটা খেদ থাকিয়া যাইবে।” বিহারী কহিল, “সম্ভব বটে।” বিহারী কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক উৎসাহের সহিত কহিল, “বেশ কথা, সে তো ভালো কথা, তুমি রাজি হইলে তো আর কোনো কথাই থাকে না। এ কর্তব্য বুদ্ধি কাল তোমার মাথায় আসিলেই তো ভালো হইত।” মহেন্দ্র। একদিন দেরিতে আসিয়া কী এমন ক্ষতি হইল। যেই বিবাহের প্রস্তাবে মহেন্দ্ৰ মনকে লাগাম ছাডিয়া দিল, সেই তাহার পক্ষে ধৈর্য রক্ষা করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, “আর অধিক কথাবার্তা না হইয়া কাজটা সম্পন্ন হইয়া গেলেই ভালো হয় ।” মাকে গিয়া কহিল, “আচ্ছা মা, তোমার অনুরোধ রাখিব। বিবাহ করিতে রাজি হইলাম।” মা মনে মনে কহিলেন, “বুঝিয়াছি, সেদিন মেজেবিউ কেন হঠাৎ তাহার বোনঝিকে দেখিতে চলিয়া গেল এবং মহেন্দ্ৰ সাজিয়া বাহির হইল।” র্তাহার বারংবার অনুরোধ অপেক্ষা অন্নপূর্ণর চক্রান্ত যে সফল হইল, ইহাতে তিনি সমস্ত বিশ্ববিধানের উপর অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, “একটি ভালো মেয়ে সন্ধান করিতেছি।” মহেন্দ্ৰ আশার উল্লেখ করিয়া কহিল, “কন্যা তো পাওয়া গেছে।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “ সে কন্যা হইবে না বাছা, তাহা আমি বলিয়া রাখিতেছি।” মহেন্দ্ৰ যথেষ্ট সংযত ভাষায় কহিল, “কোন মা, মেয়েটি তো মন্দ নয়।” রাজলক্ষ্মী। তাহার তিন কুলে কেহ নাই, তাহার সহিত বিবাহ দিয়া আমার কুটুম্বের সুখ কী হইবে। মহেন্দ্র। কুটুম্বের সুখ না হইলেও আমি দুঃখিত হইব না, কিন্তু মেয়েটিকে আমার বেশ পছন্দ श्शांgछ भां । ছেলের জেদ দেখিয়া রাজলক্ষ্মীর চিত্ত আরো কঠিন হইয়া উঠিল। অন্নপূর্ণাকে গিয়া কহিলেন, “বাপ-মা-মরা অলক্ষণা কন্যার সহিত আমার এক ছেলের বিবাহ দিয়া তুমি আমার ছেলেকে আমার কাছ হইতে ভাঙাইয়া লইতে চাও ? এতবড়ো শয়তানি!” অন্নপূর্ণ কাদিয়া কহিলেন, “মহিনের সঙ্গে বিবাহের কোনো কথাই হয় নাই, সে আপনি ইচ্ছামত তোমাকে কী বলিয়াছে আমিও জানি না।” মহেন্দ্রের মা সে কথা কিছুমাত্র বিশ্বাস করিলেন না। তখন অন্নপূর্ণ বিহারীকে ডাকাইয়া