পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি \SS বিনোদিনী মনে মনে কহিল, “স্ত্রীর হুকুমে আমার প্রতি তলব পড়িয়াছে, আমি আমনি ছুটিয়া যাইব, उाभाकि ऊभन् °ों43 न्श् ।' বিনোদিনী কোনোমতেই রাজি হইল না। আশা তখন স্বামীর কাছে বড়ো অপ্ৰতিভ হইল। মহেন্দ্ৰ মনে মনে বড়ো রাগ করিল। তাহার কাছে বাহির হইতে আপত্তি! তাহাকে অন্য সাধারণ পুরুষের মতো জ্ঞান করা! আর কেহ হইলে তো এতদিনে অগ্রসর হইয়া নানা কৌশলে বিনােদিনীর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ আলাপ-পরিচয় করিত। মহেন্দ্ৰ যে তাহার চেষ্টামাত্রও করে নাই, ইহাতেই কি বিনোদিনী তাহার পরিচয় পায় নাই। বিনোদিনী যদি একবার ভালো করিয়া জানে, তবে অন্য পুরুষ এবং মহেন্দ্রের প্রভেদ বুঝিতে পারে। যে একবার আমাকে দেখিবার চেষ্টাও করে না। যখন পিসিমার ঘরে থাকি তখন কোনো ছুতা করিয়াও যে মার ঘরে আসে না। এত ঔদাসীন্য কিসের। আমি কি জড়পদার্থ। আমি কি মানুষ না। আমি কি বুঝিতে পারিত।” আশা স্বামীর কাছে প্ৰস্তাব করিল, “তুমি কলেজে গেছ বলিয়া চোখের বালিকে আমাদের ঘরে আনিব, তাহার পরে বাহির হইতে তুমি হঠাৎ আসিয়া পড়িবে— তা হইলেই সে জব্দ হইবে।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “কী অপরাধে তাহাকে এতবড়ো কঠিন শাসনের আয়োজন।” আশা কহিল,“না, সত্যই আমার ভারি রাগ হইয়াছে। তোমার সঙ্গে দেখা করিতেও তার আপত্তি । প্ৰতিজ্ঞা ভাঙিব তবে ছাড়িব ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “তোমার প্ৰিয়সখীর দর্শনাভাবে আমি মরিয়া যাইতেছি না। আমি আমন চুরি করিয়া দেখা করিতে চাই না।” আশা সানুনয়ে মহেন্দ্রের হাত ধরিয়া কহিল, “মাথা খাও, একটিবার তোমাকে এ কাজ করিতেই হইবে। একবার যে করিয়া হোক তাহার গুমার ভাঙিতে চাই, তার পর তোমাদের যেমন ইচ্ছা তাই করিয়ো ।” মহেন্দ্র নিরুত্তর হইয়া রহিল। আশা কহিল, “লক্ষ্মীটি, আমার অনুরোধ রাখে।” अंगाडि प्लॅिव्ल । শরৎকালের স্বচ্ছ নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে বিনোদিনী মহেন্দ্রের নির্জন শয়নগহে বসিয়া আশাকে কাপোটের জুতা বুনিতে শিখাইতেছিল । আশা অন্যমনস্ক হইয়া ঘন ঘন দ্বারের দিকে চাহিয়া গণনায় ভুল করিয়া বিনোদিনীর নিকট নিজের অসাধ্য অপটুত্ব প্রকাশ করিতেছিল। “ও তোমার হইবে না, আমার কাজ আছে। আমি যাই।” আশা কহিল, “আর একটু বোসো, এবার দেখো, আমি ভুল করিব না।” বলিয়া আবার সেলাই লইয়া পড়িল । ইতিমধ্যে নিঃশব্দপদে বিনোদিনীর পশ্চাতে দ্বারের নিকট মহেন্দ্ৰ আসিয়া দাড়াইল। আশা সেলাই হইতে মুখ না তুলিয়া আস্তে আস্তে হাসিতে লাগিল। বিনোদিনী কহিল, “হঠাৎ হাসির কথা কী মনে পড়িল ।” আশা আর থাকিতে পারিল না। উচ্চকণ্ঠে হাসিয়া উঠিয়া কাপেট বিনোদিনীর গায়ের উপরে ফেলিয়া দিয়া কহিল, “না ভাই, ঠিক বলিয়াছ— ও আমার হইবে না”— বলিয়া বিনোদিনীর গলা জড়াইয়া দ্বিগুণ হাসিতে লাগিল। প্রথম হইতেই বিনোদিনী সব বুঝিয়াছিল। আশার চাঞ্চল্যে এবং ভাবভঙ্গিতে তাহার নিকট কিছুই গোপন ছিল না। কখন মহেন্দ্ৰ পশ্চাতে আসিয়া দাড়াইয়াছে তাহাও সে বেশ জানিতে পারিয়াছিল। নিতান্ত সরল নিরীহের মতো সে আশার এই অত্যন্ত ক্ষীণ ফাদের মধ্যে ধরা দিল।