পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\5、 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী এমন সুন্দর! পড়িয়া আর র্কাদিয়া বাচি না।” বিনোদিনী ভালোমন্দ বিচার করিয়া আশার উচ্ছসিত উৎসাহে বড়ো আঘাত করিত। আজিকার এই গল্পটা আশা মহেন্দ্ৰকে পড়াইবে বলিয়া স্থির করিয়া যখন সজলচক্ষে কাগজখানা বন্ধ করিল, এমন সময় মহেন্দ্ৰ আসিয়া উপস্থিত হইল। মহেন্দ্রের মুখ দেখিয়াই আশা উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল। মহেন্দ্ৰ জোর করিয়া প্ৰফুল্লতা আনিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “একলা ছাদের উপর কোন ভাগ্যবানের ভাবনায় আছ ?” আশা নায়ক-নায়িকার কথা একেবারে ভুলিয়া গিয়া কহিল, “তোমার কি শরীর আজ ভালো নাই ।” মহেন্দ্র। শরীর বেশ আছে। আশা। তবে তুমি মনে মনে কী একটা ভ আমাকে খুলিয়া বলো । মহেন্দ্ৰ আশার বাটা হইতে একটা পান তুলিয়া লইয়া মুখে দিয়া কহিল, “আমি ভাবিতেছিলাম, তোমার মাসিমা বেচারা কত দিন তোমাকে দেখেন নাই। একবার হঠাৎ যদি তুমি তাহার কাছে গিয়া পড়িতে পাের, তবে তিনি কত খুশিই হন।” আশা কোনো উত্তর না করিয়া মহেন্দ্রের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। হঠাৎ এ কথা আবার নূতন করিয়া কেন মহেন্দ্রের মনে উদয় হইল, তাহা সে বুঝিতে পারিল না। আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া মহেন্দ্ৰ কহিল, “তোমার যাইতে ইচ্ছা করে না ?” এ কথার উত্তর দেওয়া কঠিন। মাসিকে দেখিবার জন্য যাইতে ইচ্ছা করে, আবার মহেন্দ্ৰকে ছাডিয়া যাইতে ইচ্ছাও করে না। আশা কহিল, “কলেজের ছুটি পাইলে তুমি যখন যাইতে পরিবে, আমিও সঙ্গে যাইব ।” মহেন্দ্ৰ। ছুটি পাইলেও যাইবার জো নাই ; পরীক্ষার জন্য প্ৰস্তুত হইতে হইবে। আশা । তবে থাক, এখন না-ই গেলাম। মহেন্দ্র। থাক কেন । যাইতে চাহিয়াছিলে, যাও-না ! আশা । না, আমার যাইবার ইচ্ছা নাই | মহেন্দ্ৰ। এই সেদিন এত ইচ্ছা ছিল, হঠাৎ ইচ্ছা চলিয়া গেল ? আশা এই কথায় চুপ করিয়া চোখ নিচু করিয়া বসিয়া রহিল। বিনোদিনীর সঙ্গে সন্ধি করিবার জন্য বাধাহীন অবসর চাহিয়া মহেন্দ্রের মন ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছিল। আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া তাহার একটা অকারণ রাগের সঞ্চার হইল। কহিল, “আমার উপর মনে মনে তোমার কোনো সন্দেহ জন্মিয়াছে নাকি । তাই আমাকে চোখে চোখে পাহারা দিয়া রাখিতে 583 ?” আশার স্বাভাবিক মৃদুতা নম্রতা ধৈর্য মহেন্দ্রের কাছে হঠাৎ অত্যন্ত অসহ্য হইয়া উঠিল। মনে মনে কহিল, ‘মাসির কাছে যাইতে ইচ্ছা আছে, বলে যে, আমি যাইবই, আমাকে যেমন করিয়া হোক পাঠাইয়া দাও— তা নয়, কখনো হা, কখনো না, কখনো চুপচাপ— এ কী রকম।” হঠাৎ মহেন্দ্রের এই উগ্রতা দেখিয়া আশা বিস্মিত ভীত হইয়া উঠিল। সে অনেক চেষ্টা করিয়া কোনো উত্তরই ভাবিয়া পাইল না। মহেন্দ্ৰ কেন যে কখনো হঠাৎ এত আদর করে, কখনো হঠাৎ এমন নিষ্ঠুর হইয়া উঠে, তাহা সে কিছুই বুঝিতে পারে না। এইরূপে মহেন্দ্ৰ যতই তাহার কাছে দুর্বোধ্য হইয়া উঠিতেছে, ততই আশার কম্পান্বিত চিত্ত ভয়ে ও ভালোবাসায় তাহাকে যেন অত্যন্ত অধিক করিয়া বেষ্টন করিয়া ধরিতেছে। মহেন্দ্ৰকে আশা মনে মনে সন্দেহ করিয়া চোখে চোখে পাহারা দিতে চায় ! ইহা কি কঠিন উপহাস, না নির্দয় সন্দেহ ? শপথ করিয়া কি ইহার প্রতিবাদ আবশ্যক, না হাস্য করিয়া ইহা উড়াইয়া দিবার কথা ? হতবুদ্ধি আশাকে পুনশ্চ চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া অধীর মহেন্দ্র দ্রুতবেগে সেখান হইতে - حس