পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8 と > বিনোদিনী কহিল, “তোমার এখানে তোমার আত্মীয় স্ত্রীলোক কেহ নাই ?” বিহারী। আত্মীয়ও নাই, পরও নাই। পিসি আছেন দেশের বাড়িতে। বিনোদিনী। তবে তোমার দেশের বাড়িতে আমাকে লইয়া চলো। বিহারী। কী বলিয়া লইয়া যাইব । বিনোদিনী । দাসী বলিয়া। আমি সেখানে ঘরের কাজ করিব। বিহারী। পিসি কিছু আশ্চর্য হইবেন, তিনি আমাকে দাসীর অভাব তো জানান নাই। আগে শুনি, এ সংকল্প কেন মনে উদয় হইল। বসন্ত, যাও, শুইতে যাও। বসন্ত চলিয়া গেল। বিনােদিনী কহিল, “বাহিরের ঘটনা শুনিয়া তুমি ভিতরের কথা কিছুই বুঝিতে °द्भिः न ।।” বিহারী। না-ই বুঝিলাম, নাহয় ভুলই বুঝিব, ক্ষতি কী। বিনোদিনী । আচ্ছা, নাহয় ভুলই বুঝিয়ো। মহেন্দ্ৰ আমাকে ভালোবাসে। বিহারী। সে খবর তো নূতন নয়, এবং এমন খবর নয় যাহা দ্বিতীয় বার শুনিতে ইচ্ছা করে। বিনোদিনী। বার বার শুনাইবার ইচ্ছা আমারও নাই । সেইজন্যই তোমার কাছে আসিয়াছি, আমাকে আশ্রয় দাও । বিহারী । ইচ্ছা তোমার নাই ? এ বিপত্তি কে ঘটাইল। মহেন্দ্ৰ যে পথে চলিয়াছিল সে পথ হইতে তাহাকে কে ভ্ৰষ্ট করিয়াছে। বিনোদিনী। আমি করিয়াছি। তোমার কাছে লুকাইব না, এ-সমস্তই আমারই কাজ। আমি মন্দ হই যা হই, একবার আমার মতো হইয়া আমার অন্তরের কথা বুঝিবার চেষ্টা করো। আমার বুকের জ্বালা লইয়া আমি মহেন্দ্রের ঘর জ্বালাইয়াছি। একবার মনে হইয়াছিল, আমি মহেন্দ্ৰকে ভালোবাসি, কিন্তু তাহা ভুল। বিহারী। ভালোবাসিালে কি কেহ এমন অগ্নিকাণ্ড করিতে পারে। বিনোদিনী। ঠাকুরপো, এ তোমার শাস্ত্রের কথা। এখনো ও-সব কথা শুনিবার মতো মতি আমার হয় নাই। ঠাকুরপো, তোমার পুঁথি রাখিয়া একবার অন্তর্যামীর মতো আমার হৃদয়ের মধ্যে দৃষ্টিপাত করো। আমার ভালোমন্দ সব আজ আমি তোমার কাছে বলিতে চাই । বিহারী। পুঁথি সাধে খুলিয়া রাখি, বোঠান। হৃদয়কে হৃদয়েরই নিয়মে বুঝিবার ভার অন্তর্যামীরই উপরে থাক, আমরা পুঁথির বিধান মিলাইয়া না চলিলে শেষকালে যে ঠেকাইতে পারি না। বিনোদিনী। শুন ঠাকুরপো, আমি নির্লজ্জ হইয়া বলিতেছি, তুমি আমাকে ফিরাইতে পারিতে। মহেন্দ্ৰ আমাকে ভালোবাসে বটে, কিন্তু সে নিরেট অন্ধ, আমাকে কিছুই व्यों | 6ीददद 26न् বলো, সে কথা আজ চাপা দিতে চেষ্টা করিয়ো না । বিহারী। সত্যই বলিতেছি, আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করিয়াছিলাম। বিনোদিনী। ভুল কর নাই। ঠাকুরপো, কিন্তু বুঝিলেই যদি, শ্রদ্ধা করিলেই যদি, তবে সেইখানেই থামিলে কেন। আমাকে ভালোবাসিতে তোমার কী বাধা ছিল। আমি আজ নির্লজ্জ হইয়া তোমার কাছে আসিয়াছি, এবং আমি আজ নির্লজ্জ হইয়াই তোমাকে বলিতেছি— তুমিও আমাকে ভালোবাসিলে না কেন। আমার পোড়াকপাল! তুমিও কিনা আশার ভালোবাসায় মজিলে। না, তুমি রাগ করিতে পাইবে না। বোসো ঠাকুরপো, আমি কোনো কথা ঢাকিয়া বলিব না। তুমি যে আশাকে ভালোবাস, সে কথা তুমি যখন নিজে জানিতে না, তখনো আমি জানিতাম। কিন্তু আশার মধ্যে তোমরা কী দেখিতে পাইয়াছ, আমি কিছুই বুঝিতে পারি না। ভালোই বল আর মন্দই বল, তাহার আছে কী। বিধাতা কি পুরুষের দৃষ্টির সঙ্গে অন্তর্দৃষ্টি কিছুই দেন নাই। তোমরা কী দেখিয়া, কতটুকু দেখিয়া ভোল। নির্বোধি ! অন্ধ ! বিহারী উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, “আজ তুমি আমাকে যাহা শুনাইবে সমস্তই আমি শুনিব— কিন্তু