পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S مما S. মনে আছে, বলিবার জন্য বুক ফাটিয়া যাইতেছে, তাহা তোমাকে জানাইবা না প্ৰতিজ্ঞা কবিয়ছি— সেই প্ৰতিজ্ঞা রক্ষা করিলাম । CASEAN3 বিনোদ-বোঠান।” বিনোদিনী চিঠি ডাকে দিল--- পাড়ার লোকে ছি ছি করিতে লাগিল। ঘরে দ্বার রুদ্ধ করিয়া থাকে, “চিঠি লেখে, চিঠি পাইবার জন্য পেয়াদাকে গিয়া আক্রমণ করে- কলিকাতায় দুদিন থাকিলেই ণে জ্ঞাপম খোয়াইয়া কি এমনই মাটি হইতে হয়। পরদিনেও চিঠি পাইল না। বিনোদিনী সমস্ত দিন স্তব্ধ হইয়া রহিল, তাহার মুখ কঠিন হইয়া উঠিল । অন্তরে-বাহিরে চারি দিকের আঘাত ও অপমানের মন্থনে তাহার হৃদয়ের অন্ধকার তলদেশ ঠাইতে নিষ্ঠুর সংহরিশক্তি মূর্তিপরিগ্রহ করিয়া বাহির হইয়া আসিতে চাহিল। সেই নিদারুণ নিষ্ঠুরতার আবির্ভাব বিনোদিনী সািভয়ে উপলব্ধি করিয়া ঘরে দ্বার দিল । তাহার কাছে বিহারীর কিছুই ছিল না, ছবি না, একছত্ৰ চিঠি না, কিছুই না। সে শূন্যের মধ্যে কিছু যেন একটা খুজিয়া বেড়াইতে লাগিল। সে বিহারীর একটা-কিছু চিহ্নকে বক্ষে জড়াইয়া ধরিয়া শুদ্ধ ৮ সুক্ষ জল আনিতে চায়। আশ্রমজলে অন্তরের সমস্ত কঠিনতাকে গলাইয়া বিদ্রোহবহিরুকে নির্বাপিত কবিয়া বিহারার কঠোর আদেশকে হস্রদায়ের কোমলতম প্রেমের সিংহাসনে বসাইয়া রাখিতে চায়। কিন্তু অনাবৃষ্টির মধ্যাহ-আকাশের মতো তাহার হৃদয় কেবল জুলিতেই লাগিল, দিগদিগন্তে কোথাও সে এক ফোটাও অশ্রদ্ধর লক্ষণ দেখিতে পাইল না । বিনোদিনী! শুনিয়াছিল, একাগ্রামনে ধান করিতে করিতে যাহাকে ডাকা যায়, সে না আসিয়া থাকিতে পারে না। তাই জোড়হাত করিয়া চোখ বুজিয়া সে বিহারীকে ডাকিতে লাগিল, “আমার জীবন শূন্য, আমার হৃদয় শুন্য, আমার চতুর্দিক শূন্য— এই শূন্যতার মাঝখানে একবার তুমি এসো, এক মুহুর্তের জন্য এসো, তোমাকে আসিতেই হইবে, আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়িব না।” এই কথা প্ৰাণপণ বলে বলিতে বলিতে বিনোদিনী যেন যথার্থ বল পাইল। মনে হইল, যেন এই প্রেমের বল, এই আহবানব বল, বৃথা হইবে না। কেবল স্মরণমাত্র করিয়া, দুরাশার গোড়ায় হৃদয়ের বা ও সেচন করিয়া হসন্দয় কেবল অবসন্ন হইয়া পড়ে । কিন্তু এইরূপ একমনে ধ্যান করিয়া প্ৰাণপণ শক্তিতে কামনা করিতে থাকিলো নিজেকে যেন সহায়বান মনে হয়। মনে হয়, যেন প্ৰবল ইচ্ছা! জগতের আর-সমস্ত ছাড়িয়া কেবল বাঞ্ছিতকে আকৰ্ষণ করিতে থাকতে প্ৰতিমুহূর্তে ক্ৰমে ক্ৰমে ধীরে ধারে সে নিকটবর্তী হইতেছে । বিহারীর ধ্যানে যখন সন্ধ্যার দীপশন্য অন্ধকার ঘর নিবিড়ভাবে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে— যখন সমাজ-সংসার, গ্রাম-পল্লী, সমস্ত বিশ্বভুবন প্রিলয়ে বিলীন হইয়া গিয়াছে— তখন বিনোদিনী হঠাৎ দ্বারে আঘাত শুনিয়া ভূমিতল হইতে দ্রুতবেগে দাড়াইয়া উঠিল, অসংশয় বিশ্বাসে ছুটিয়া দ্বার খুলিয়া কহিল, “প্ৰভু, আসিয়াছ ?” তাহারণ দৃঢ় প্রত্যয় হইল, এই মুহূর্তে জগতের আর কেহই তাহার দ্বারে আসিতে 26दै ब्ा | মহেন্দ্ৰ কহিল, “আসিয়াছি, বিনোদ ।” বিনোদিনী অপরিসীম বিরাগ ও প্রচণ্ড ধিককারের সহিত বলিয়া উঠিল, “যাও, যাও, যাও এখান C. a 2-& RTS " মহেন্দ্ৰ অকস্মাৎ স্তম্ভিত হইয়া গেল । “হ্যােলা বিন্দি, তোর দিদিশাশুড়ি যদি কাল”— এই কথা বলিতে বলিতে কোনো প্রৌঢ়া প্রতিবেশিনী বিনোদিনীর দ্বারের কাছে আসিয়া “ও মা” বলিয়া মস্ত ঘোমটা টানিয়া সবেগে পলায়ন করিল।