পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ @ Հ Գ লাগিলেন, তাহার পর রাজি হইয়া গেলেন। কহিলেন, “ভগবান হরি নারী-ছদ্মবেশে পুরুষকে ভুলিয়েছিলেন, তুই শৈল যদি পুরুষ-ছদ্মবেশে পুরুষকে ভোলাতে পারিস তা হলে হরিভক্তি উড়িয়ে দিয়ে তোর পুজোতেই শেষ বয়সটা কাটাব। কিন্তু মা যদি টের পান ?” শৈলী। তিন কন্যাকে কেবলমাত্র স্মরণ করেই মা মনে মনে এত অস্থির হয়ে ওঠেন যে, তিনি আমাদের আর খবর রাখতে পারেন না। তার জন্যে ভেবো না। রসিক। কিন্তু সভায় কিরকম করে সভ্যতা করতে হয়, সে আমি কিছুই জানি নে । শৈল। আচ্ছা সে আমি চালিয়ে নেব। শ্ৰীশ ও বিপিন শ্ৰীশ। তা যাই বল, অক্ষয়বাবু যখন আমাদের সভাপতি ছিলেন তখন আমাদের চিরকুমার-সভা জন্মেছিল ভালো। হাল সভাপতি চন্দ্ৰবাবু কিছু কড়া। বিপিন। তিনি থাকতে রস কিছু বেশি জমে উঠেছিল। চিরকৌমাৰ্যব্রতের পক্ষে রসাধিক্যটা ভালো নয়। আমার তো এই মত । শ্ৰীশ । আমার মত ঠিক উলটো। আমাদের ব্ৰত কঠিন বলেই রসের দরকার বেশি। রুক্ষ মাটিতে ফসল ফলাতে গেলে কি জলসিঞ্চনের প্রয়োজন হয় না ? চিরজীবন বিবাহ করব না। এই প্ৰতিজ্ঞাই যথেষ্ট, তাই বলেই কি সব দিক থেকেই শুকিয়ে মরতে হবে ? বিপিন। যাই বল, হঠাৎ কুমারসভা ছেড়ে দিয়ে বিবাহ করে অক্ষয়বাবু আমাদের সভাটাকে যেন আলগা করে দিয়ে গেছেন। ভিতরে ভিতরে আমাদের সকলেরই প্ৰতিজ্ঞার জোর কমে গেছে। শ্ৰীশ। কিছুমাত্র না। আমার নিজের কথা বলতে পাবি, আমার প্রতিজ্ঞার বল আরো বেড়েছে। যে ব্ৰত সকলে অনায়াসেই রক্ষা করতে পারে তার উপরে শ্রদ্ধা থাকে না । বিপিন। একটা সুখবর দিই শোনো। শ্ৰীশ । তোমার বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছে না কি ? বিপিন। হয়েছে বৈকি, তোমার দৌহিত্রীর সঙ্গে। ঠাট্টা রাখো, পূর্ণ কাল কুমারসভার সভ্য হয়েছে । শ্ৰীশ। পূর্ণ ! বল কী ! তা হলে তো শিলা জলে ভাসল! বিপিন। শিলা। আপনি ভাসে না হে! তাকে আর কিছুতে অকুলে ভাসিয়েছে। আমার যথাবুদ্ধি তার ইতিহাসটুকু সংকলন করেছি। শ্ৰীশ । তোমার বুদ্ধির দৌড়টা কিরকম শুনি। বিপিন। জানই তো, পূর্ণ সন্ধ্যাবেলায় চন্দ্ৰবাবুর কাছে পড়ার নোট নিতে যায়। সেদিন আমি আর পূর্ণ একসঙ্গেই একটু সকাল-সকাল চন্দ্ৰবাবুর বাসায় গিয়েছিলেম। তিনি একটা মিটিং থেকে সবে এসেছেন। বেহার কেরোসিন জ্বেলে দিয়ে গেছে— পূর্ণ বইয়ের পাত ওলটাচ্ছে, এমন সময়— কী আর বলব ভাই, সে বঙ্কিমবাবুর নভেল বিশেষ— একটি কন্যা পিঠে বেণী দুলিয়ে—— শ্ৰীশ। বল কী হে বিপিন ! বিপিন। শোনোই-না। এক হাতে থালায় করে চন্দ্ৰবাবুর জন্যে জলখাবার আর-এক হাতে জলের গ্লাস নিয়ে হঠাৎ ঘরের মধ্যে এসে উপস্থিত। আমাদের দেখেই তো কুষ্ঠিত, সচকিত, লজ্জায় মুখ রক্তিমবর্ণ। হাত জোড়া, মাথায় কাপড় দেবার জো নেই। তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর খাবার রেখেই ছুটি । ব্ৰাহ্ম বটে, কিন্তু তেত্ৰিশ কোটির সঙ্গে লজাকে বিসর্জন দেয় নি এবং সত্য বলছি শ্ৰীকেও রক্ষা করেছে । শ্ৰীশ। বল কী বিপিন, দেখতে ভালো বুঝি ?