পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G SDO রবীন্দ্র-রচনাবলী শব্দে টানিতে আরম্ভ করিল। অক্ষয় পকেট হইতে কড়া বৰ্মা চুরোট বাহির করিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে দিলেন। যদিচ তাহার চুরোট অভ্যাস ছিল না, তবু সে সদ্যস্থাপিত ইয়ার্কির খাতিরে প্রাণের মায়া পরিত্যাগ করিয়া মৃদুমন্দ টান দিতে লাগিল এবং কোনো গতিকে কাসি চাপিয়া রাখিল। অক্ষয় কহিলেন, “এখন কাজের কথাটা শুরু করা যাক। কী বলেন ?” মৃত্যুঞ্জয় চুপ করিয়া রহিল, দারুকেশ্বর বলিল, “তা নয় তো কী ? শুভস্য শীঘ্ৰং!” বলিয়া হাসিতে লাগিল, ভাবিল, ইয়ার্কি জমিতেছে। তখন অক্ষয় গভীর হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মুগি না মটন!” মৃত্যুঞ্জয় অবাক হইয়া মাথা চুলকাইতে লাগিল। দারুকেশ্বর কিছু না বুঝিয়া, অপরিমিত হাসিতে আরম্ভ করিল। মৃত্যুঞ্জয় ক্ষুব্ধ লজ্জিত হইয়া ভাবিতে লাগিল, এরা দুজন তো বেশ জমাইয়াছে, আমিই নিরেট বোকা । অক্ষয় কহিলেন, “আরো মশায়, নাম শুনেই হাসি ! তা হলে তো গন্ধে অজ্ঞান এবং পাতে পড়লে মারাই যাবেন! তা, যেটা হয় মন স্থির করে বলুন— মুগি হবে না মটন হবে ?” তখন দুজনে বুঝিল, আহারের কথা হইতেছে। ভীরু মৃত্যুঞ্জয় নিরুত্তর হইয়া ভাবিতে লাগিল । দারুকেশ্বর লালায়িত রাসনায় একবার চারি দিকে চাহিয়া দেখিল । শুনিয়া দারুকেশ্বর দুই হাতে দুই পা চাপড়াইয়া হাসিতে লাগিল। কহিল, “তা, মুগিই ভালো, কট্রলেট ! কী বলেন ?” লুব্ধ মৃত্যুঞ্জয় সাহস পাইয়া বলিল, “মটনটাই বা মন্দ কী ভাই! চপ—” বলিয়া আর কথাটা শেষ করিতে পারিল না । অক্ষয়। ভয় কী দাদা, দু-ই হবে! দোমনা করে খেয়ে সুখ হয় না। চাকরকে ডাকিয়া বলিলেন, “ওরে, মোড়ের মাথায় যে হোটেল আছে সেখান থেকে কলিমাদি খানসামাকে ডেকে আন দেখি ।” তাহার পর অক্ষয় বুড়ো আঙুল দিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের গা টিপিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “বিয়ার না শেরি ?” মৃত্যুঞ্জয় লজ্জিত হইয়া মুখ বাকাইল। দারুকেশ্বর সঙ্গীটিকে বদরসিক বলিয়া মনে মনে গালি দিয়া কহিল, “হুইস্কির বন্দোবস্ত নেই বুঝি ?” অক্ষয় তাহার পিঠ চাপড়াইয়া কহিলেন, “ নেই তো কী ? বেঁচে আছি কী করে ?” বলিয়া যাত্রার সুরে গাহিয়া উঠিলেন— অভয় দাও তো বলি আমার wish কী, একটি ছটাক সোডার জলে পাকি তিন পোয়া হুইস্কি ! ক্ষীণপ্ৰকৃতি মৃত্যুঞ্জয়ও প্ৰাণপণে হাস্য করা কর্তব্য বোধ করিল এবং দারুকেশ্বর ফস করিয়া একটা বই টানিয়া লইয়া। টপাটপ বাজাইতে আরম্ভ করিল। অক্ষয় দু-লাইন গাহিয়া থামিবামাত্র দারুকেশ্বর বলিল, “দাদা, ওটা শেষ করে ফেলো!” বলিয়া নিজেই ধরিল, “অভয় দাও তো বলি আমার wish কী।” মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে তাহাকে বাহাদুরি দিতে লাগিল । অক্ষয় মৃত্যুঞ্জয়কে ঠেলা দিয়া কহিলেন, “ধরো-না হে, তুমিও ধরে !” সলজ মৃত্যুঞ্জয় নিজের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য মৃদুস্বরে যোগ দিল— অক্ষয় ডেস্ক চাপড়াইয়া বাজাইতে লাগিলেন। এক জায়গায় হঠাৎ থামিয়া গভীর হইয়া কহিলেন, “হা, হঁহা, আসল কথাটা জিজ্ঞাসা করা হয় নি। এ দিকে তো সব ঠিক— এখন আপনারা কী হলে রাজি হন ?” দারুকেশ্বর কহিল, “আমাদের বিলেতে পাঠাতে হবে ।” অক্ষয় কহিলেন, “সে তো হবেই । তার না কাটলে কি শ্যাম্পেনের ছিপি খোলে ? দেশে