পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ Ꮹ: ᏔᏔ. অক্ষয় কহিলেন, “তা, মা, ওরা যদি রাগ করে চলে যায় তা হলে দুটি পাত্ৰ এখনই হাতছাড়া হবে। তাই ওরা যা বলছে তাই শুনতে হচ্ছে, আমাকে সুদ্ধ মদ ধরাবে দেখছি।” পুরবালা কহিলেন, “বিদায় করো, বিদায় করো, এখনই বিদায় করো।” জগত্তারিণী ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “বাবা, এখানে মুগি খাওয়া-টাওয়া হবে না, তুমি ওদের বিদায় করে দাও । আমার ঘাট হয়েছিল আমি রসিককাকাকে পাত্ৰ সন্ধান করতে দিয়েছিলুম। তার দ্বারা যদি কোনো কাজ পাওয়া যায় ।” রমণীগণের প্রস্থান। অক্ষয় ঘরে আসিয়া দেখেন, মৃত্যুঞ্জয় পলায়নের উপক্ৰম করিতেছে এবং মৃত্যুঞ্জয় অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করিয়া সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়াছে। অক্ষয় ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র মৃত্যুঞ্জয় রাগের স্বরে বলিয়া উঠিল, “না মশায়, আমি ক্ৰিশ্চন হতে পারব না, আমার বিয়ে করে কােজ নেই।” অক্ষয় কহিলেন, “তা, মশায়, আপনাকে কে পায়ে ধরাধরি করছে।” অক্ষয় কহিলেন, “রাজি থাকেন তো গির্জায় যান-না মশায়। আমার সাত পুরুষে ক্রিশচন করা ব্যাবসা নয় ।” দারুকেশ্বর কহিল, “ঐ-যে কোন বিশ্বাসের কথা বললেন—” অক্ষয় । তিনি টেরিটির বাজারে থাকেন, তার ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। দারুকেশ্বর। আর বিবাহটা ? অক্ষয় । সেটা এ বংশে নয় । দারুকেশ্বর । তা হলে এতক্ষণ পরিহাস করছিলেন মশায় ? খাওয়াটাও কিঅক্ষয় । সেটাও এ ঘরে নয় । - দারুকেশ্বর । অন্তত হােটেলেঅক্ষয় । সে কথা ভালো।— বলিয়া টাকার ব্যাগ হইতে গুটিকয়েক টাকা বাহির করিয়া দুটিকে বিদায় করিয়া দিলেন । তখন নৃপর হাত ধরিয়া টানিয়া নীরবালা বসন্তকালের দমকা হাওয়ার মতো ঘরের মধ্যে আসিয়া প্ৰবেশ করিল। কহিল, “মুখুজ্যোমশায়, দিদি তো দুটির কোনোটিকেই বাদ দিতে চান না!” নূপ তাহার কাপোলে গুটি দু-তিন অঙ্গুলির আঘাত করিয়া কহিল, “ফের মিথ্যে কথা বলছিস ?” অক্ষয়। ব্যস্ত হােস নে ভাই, সত্যমিথ্যের প্রভেদ আমি একটু একটু বুঝতে পারি। নীরবালা। আচ্ছা মুখুজ্যোমশায়, এ দুটি কি রসিকদাদার রসিকতা, না। আমাদের সেজদিদিরই ফাডা ? অক্ষয়। বন্দুকের সকল গুলিই কি লক্ষ্যে গিয়ে লাগে ? প্রজাপতি টাগোট প্র্যাকটিস করছিলেন, এ দুটাে ফসকে গেল। প্রথম প্রথম এমন গোটাকতক হয়েই থাকে। এই হতভাগ্য ধরা পড়বার পূর্বে তোমার দিদির ছিপে অনেক জলচর ঠোকর দিয়ে গিয়েছিল, বড়শি বিধল কেবল আমারই কপালে। বলিয়া কপালে চপেটাঘাত করিলেন । নৃপবালা। এখন থেকে রোজই প্ৰজাপতির প্র্যাকটিস চলবে না কি মুখুজ্যোমশায় ? তা হলে তো আর বাচা যায় না ! স্বালা। কেন ভাই, দুঃখ করিস ? রোজই কি ফাঁসকাবে ? একটা-না-একটা এসে ঠিকমতন পোছবে। রাসিকের প্রবেশ নীরবালা। রসিকদাদা, এবার থেকে আমরাও তোমার জন্যে পাত্রী জোটাচ্ছি। রসিক। সে তো সুখের বিষয়। ] নীরবালা ! হা! সুখ দেখিয়ে দেব ! তুমি থাক হােগলার ঘরে, আর পরের দালানে আগুন লাগাতে