পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ ○ ○○ অক্ষয় । কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড তো আজ হয়ে গেল। রসিক। লঙ্কাকাণ্ডের আয়োজনও হচ্ছে, চিরকুমার-সভার স্বৰ্ণলঙ্কায় আগুন লাগাতে চলেছি। পুরবালা। শৈল তার মধ্যে কে ? রসিক। হনুমান তো নয়ই। অক্ষয় । উনিই হচ্ছেন স্বয়ং আগুন । রসিক। এক ব্যক্তি ওঁকে লেজে করে নিয়ে যাবেন। পুরবালা। আমি কিছু বুঝতে পারছি নে। শৈল, তুই চিরকুমার-সভায় যাবি না কি। শৈল। আমি যে সভ্য হব। পুরবালা। কী বলিস তার ঠিক নেই! মেয়েমানুষ আবার সভ্য হবে কী ! শৈল। আজকাল মেয়েরাও যে সভ্য হয়ে উঠেছে। তাই আমি শাড়ি ছেড়ে চাপকন ধরব ঠিক করেছি। ! পুরবালা। বুঝেছি, ছদ্মবেশে সভ্য হতে যাচ্ছিস বুঝি। চুলটা তো কেটেইছিস, ঐটেই বাকি ছিল। তোমাদের যা খুশি করো, আমি এর মধ্যে নেই। অক্ষয়। না না, তুমি এ দলে ভিড়ো না! আর যার খুশি পুরুষ হােক, আমার অদৃষ্টে তুমি চিরদিন মেয়েই থেকো— নইলে ব্রীচ অফ কনট্রাকটু— সে বড়ো ভয়ানক মকদ্দমা !—বলিয়া সিন্ধুতে গান ধরিলেন চির-পুরানো চাদ ! চিরদিবস এমনি থেকে আমার এই সাধ । পুরানো হাসি পুরানো সুধা, মিটায় মম পুরানো ক্ষুধা— নূতন কোনো চকোর যেন পায় না পরসাদ ! পুরবালা রাগ করিয়া চলিয়া গেল। অক্ষয় শৈলবালাকে আশ্বাস দিয়া কহিলেন, “ভয় নেই। রাগটা হয়ে গেলেই মনটা পরিষ্কার হবে- একটু অনুতাপও হবে— সেইটেই সুযোগের সময়।” রসিক । কোপো যত্ৰ ভুকুটিরচনা নিগ্ৰহাে যত্র মে নং। যত্রান্যোন্যস্মিতমনুনয়ো যত্র দৃষ্টিঃ প্ৰসাদঃ। শৈলী। রসিকদাদা, তুমি তো দিব্যি শ্লোক আউড়ে চলেছ- কোপ জিনিসটা কী, তা মুখুজ্যোমশায় টের পাবেন । রসিক। আরে ভাই, বদল করতে রাজি আছি। মুখুজ্যোমশায় যদি শ্লোক আওড়াতেন। আর আমার উপরেই যদি কোপ পড়ত তা হলে এই পোড়া কপালকে সোনা দিয়ে বাধিয়ে রাখতুম। কিন্তু দিদি, ঐ জলখাবারের থালা দুটি তো মান করে নি, বসে গেলে বোধ হয় আপত্তি নেই ? অক্ষয়। ঠিক ঐ কথাটাই ভাবছিলুম। উভয়ে আহারে উপবেশন করিলেন, শৈলবালা পাখা লইয়া বাতাস করিতে লাগিলেন। চতুর্থ পরিচ্ছেদ আহারের পর শৈলবালা ডাকিল, “মুখুজ্যোমশায়।” অক্ষয় অত্যন্ত ত্ৰস্তাভাব দেখাইয়া কহিলেন, “আবার মু য়! এই বালখিল্য মুনিদের ধ্যানভঙ্গ-ব্যাপারের মধ্যে আমি নেই।” শৈলবালা। ধ্যানভঙ্গ আমরা করব। কেবল মুনিকুমারগুলিকে এই বাড়িতে আন চাই। অক্ষয় চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া কহিলেন, “সভাসুদ্ধ এইখানে উৎপাটিত করে আনতে হবে। যত দুঃসাধ্য কাজ সবই এই একটিমাত্ৰ মুখুজ্যোমশায়কে দিয়ে ?” শৈলবালা হাসিয়া কহিল, “মহাবীর হবার ঐ তো মুশকিল। যখন গন্ধমাদনের প্রয়োজন হয়েছিল