পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

?○br রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী থাকেন তবে আমাদের এই পরিত্যক্ত সভাক্ষেত্ৰ সেই এক তপস্বীর তপঃপ্রভাবে পবিত্ৰ উজল হয়ে থাকবে, এবং তার চিরজীবনের তপস্যার ফল দেশের পক্ষে কখনোই ব্যর্থ হবে না।” অন্যমনস্কভাবে কী দেখিতে লাগিলেন। কিন্তু পূর্ণর এই বক্তৃতা যথাস্থানে যথাবেগে গিয়া পৌঁছিল। চন্দ্ৰীমাধববাবুর একাকী তপস্যার কথায় নির্মলার চক্ষু ছলছল করিয়া আসিল এবং বিচলিত বালিকার চাবির গোছার ঝনক-শব্দ উৎকৰ্ণ পূর্ণকে পুরস্কৃত করিল। বিপিন চুপ করিয়া ছিল, এতক্ষণ পরে সে তাহার জলদমন্দ্ৰ গভীর কণ্ঠে কহিল, “আমরা এ সভার যোগ্য কি অযোগ্য কালেই তার পরিচয় হবে, কিন্তু কাজ করাও যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় তবে সেটা কোনো এক সময়ে শুরু করা উচিত। আমার প্রশ্ন এই— কী করতে হবে ?” চন্দ্ৰীমাধব উজজুল উৎসাহিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “এই প্রশ্নের জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম, কী করতে হবে ? এই প্রশ্ন যেন আমাদের প্রত্যেককে দংশন করে অধীর করে তোলে, কী করতে হবে ? বন্ধুগণ, কাজই একমাত্র ঐক্যের বন্ধন। একসঙ্গে যারা কাজ করে তারাই এক। এই সভায় আমরা যতক্ষণ সকলে মিলে একটা কাজে নিযুক্ত না হব ততক্ষণ আমরা যথার্থ এক হতে পারব না। অতএব বিপিনবাবু আজ এই যে প্রশ্ন করেছেন— কী করতে হবে- এই প্ৰশ্নকে নিবতে দেওয়া হবে না। সভ্যমহাশয়গণ, আপনারা উত্তর করুন কী করতে হবে ?” হবে, আমাদের দলকে পুষ্ট করে তুলতে হবে, আমাদের সভাটিকে সূক্ষ্ম সূত্রস্বরূপ করে সমস্ত ভারতবর্ষকে গেথে ফেলতে হবে।” বিপিন হাসিয়া কহিল, “ সে ঢের সময় আছে, যা কালই শুরু করা যেতে পারে এমন একটা কিছু কাজ বলো। ‘মারি তো গণ্ডার লুঠি তো ভাণ্ডার যদি পণ করে বাস তবে গণ্ডারও বাচবে ভাণ্ডারও বাচবে, তুমিও যেমন আরামে আছ তেমনি আরামে থাকবে। আমি প্ৰস্তাব করি আমরা প্ৰত্যেকে দুটি করে বিদেশী ছাত্ৰ পালন করব, তাদের পড়াশুনো এবং শরীর-মনের সমস্ত চচার ভার আমাদের উপর থাকবে ।” শ্ৰীশ কহিল, “এই তোমার কাজ ! এর জন্যই আমরা সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেছি! শেষকালে ছেলে মানুষ করতে হবে, তা হলো নিজের ছেলে কী অপরাধ করেছে!” বিপিন বিরক্ত হইয়া কহিল, “তা যদি বল তা হলে সন্ন্যাসীর তো কমই নেই ; কমের মধ্যে ভিক্ষে আর ভ্ৰমণ আর ভণ্ডামি ।” শ্ৰীশ রাগিয়া কহিল, “আমি দেখছি আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন। এ সভার মহৎ উদ্দেশ্যের প্ৰতি যাদের শ্রদ্ধামাত্র নেই, তারা যত শীঘ্র এ সভা পরিত্যাগ করে সন্তানপালনে প্ৰবৃত্ত হন ততই আমাদের মঙ্গল !” বিপিন আরক্তবর্ণ হইয়া বলিল, “নিজের সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই নে কিন্তু এ সভায় এমন কেউ কেউ আছেন র্যারা সন্ন্যাসগ্রহণের কঠোরতা এবং সন্তানপালনের ত্যাগাস্বীকার দুয়েরই অযোগা, তাদের- ” চন্দ্ৰমাধববাবু চোখের কাছ হইতে কাৰ্যবিবরণের খাতা নামাইয়া কহিলেন, “উত্থাপিত প্ৰস্তাব সম্বন্ধে পূর্ণবাবুর অভিপ্ৰায় জানতে পারলে আমার মন্তব্য প্রকাশ করবার অবসর পাই।” পূৰ্ণ কহিল, “অদ্য বিশেষরূপে সভার ঐক্যবিধানের জন্য একটা কাজ অবলম্বন করবার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কাজের প্রস্তাবে ঐক্যের লক্ষণ কিরকম পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে সে আর কাউকে চােখে আঙুল দিয়ে দেখাবার দরকার নেই। ইতিমধ্যে আমি যদি আবার একটা তৃতীয় মত প্ৰকাশ করে বসি তা হলে বিরোধানলে তৃতীয় আহুতি দান করা হবে— অতএব আমার প্রস্তাব এই যে, সভাপতিমশায় আমাদের কাজ নির্দেশ করে দেবেন এবং আমরা তাই শিরোধার্য করে নিয়ে বিনা