পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ · 6 8S পঞ্চম পরিচ্ছেদ অক্ষয় বলিলেন, “স্বামীই স্ত্রীর একমাত্র তীর্থ। মান কি না ?” পুরবালা। আমি কি পণ্ডিতমশায়ের কাছে শাস্ত্রের বিধান নিতে এসেছি? আমি মার সঙ্গে আজ কাশী চলেছি। এই খবরটি দিয়ে গেলুম। অক্ষয় । খবরটি সুখবর নয়— শোনাবামাত্র তোমাকে শাল-দোশালা বকশিশ দিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে না । পুরবালা। ইস, হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে— না ? সহ্য করতে পারছি না ? অক্ষয় । আমি কেবল উপস্থিত বিচ্ছেদের কথা ভাবছি নে— এখন তুমি দুদিন না রইলে, আরো কজন রয়েছেন, একরকম করে এই হতভাগ্যের চলে যাবে। কিন্তু এর পরে কী হবে ? দেখো, ধর্মকর্মে স্বামীকে এগিয়ে যেয়ো না— স্বগে তুমি যখন ডবল প্রোমোশন পেতে থাকবে আমি তখন পিছিয়ে থাকব।— তোমাকে বিষ্ণুদূতে রথে চড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর আমাকে যমদূতে কানে ধরে হটিয়ে দৌড় করাবে গান। পরজ স্বগে তোমায় নিয়ে যাবে উড়িয়ে, ইচ্ছা হবে টিকির ডগা ধরে বিষ্ণুদূতের মাথাটা দিই গুড়িয়ে । পুরবালা । আচ্ছা, আচ্ছা, থামো ! অক্ষয় । আমি থামব, কেবল তুমিই চলবে। উনবিংশ শতাব্দীর এই বন্দোবস্ত ?— নিতান্তই 5ळल{ळेल ? পুরবালা ! চললুম। অক্ষয় । আমাকে কার হাতে সমপণ করে গেলে ? পুরবালা ; রসিকদাদার হাতে। অক্ষয় । মেয়েমানুষ, হস্তান্তর করবার আইন কিছুই জান না। সেইজন্যেই তো বিরহাবস্থায় উপযুক্ত হাত নিজেই খুঁজে নিয়ে আত্মসমপণ করতে হয়। পুরবালা ! তোমাকে তো বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হবে না। অক্ষয় । তা হবে না। গান | কাফি কার হাতে যে ধরা দেব। প্ৰাণ ; তাই ভাবতে বেলা অবসান । ডান দিকেতে তাকাই যখন, বায়ের লাগি কঁদে রে মন বায়ের লাগি ফিরলে তখন দক্ষিণেতে পড়ে টান । আচ্ছা, আমার যেন সাস্তুনার গুটি দুই-তিন সদুপায় আছে, কিন্তু তুমি বিরহ-যামিনী কেমনে যাপিবে, বিচ্ছেদতাপে যখন তাপিবে এপাশ ও পাশ বিছানা মাপিবে, মকরকেতনে কেবলি শাপিবে পুরবালা। রক্ষে করো, ও মিলটা ঐখানেই শেষ করো। অক্ষয় । দুঃখের সময় আমি থামতে পারি নে— কাব্য আপনি বেরোতে থাকে। মিল ভালো না