পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ܓ 8 ?) বাস অমিত্ৰাক্ষর আছে, তুমি যখন বিদেশে থাকবে আমি ‘আর্তনাদবধ কাব্য’ বলে একটা কাব্য লিখব- সখী, তার আরম্ভটা শোনো (সাড়ম্বরে ) বাষ্পীয় শকটে চড়ি নারীচুড়ামণি পুরবালা চলি যবে গেলা কাশীধামে বিকালে, কহ হে দেবী অমৃতভাষিণী কোন বরাঙ্গনে বরি বরমাল্যদানে যাপিলা বিচ্ছেদমাস শ্যালীত্রেয়ীশালী শ্ৰীঅক্ষয় ! পুরবালা । ( সগর্বে) আমার মাথা খাও, ঠাট্টা নয়, তুমি একটা সত্যিকার কাব্য লেখো-না। অক্ষয়। মাথা খাওয়ার কথাটা যদি বললে, আমি নিজের মাথাটি খেয়ে অবধি বুঝেছি। ওটা সুখাদ্যের মধ্যে গণ্য নয়। আর ঐ কাব্য লেখা, ও কার্যটাও সুসাধ্য বলে জ্ঞান করি নে। বুদ্ধিতে আমার এক জায়গায় ফুটাে আছে, কাব্য জমতে পারে না- ফস ফস করে বেরিয়ে পড়ে। তুমি জান আমার গাছে ফল কেন না। ফলে ! যেমনি ফুলটি ফুটে ওঠে আনি চরণতলে । কিন্তু আমার প্রশ্নের তো কোনো উত্তর পেলুম না। কৌতুহলে মরে যাচ্ছি। কাশীতে যে চলেছি, উৎসাহটা কিসের জন্যে ? আপাতত সেই বিষ্ণুদূতটাকে মনে মনে ক্ষমা করলুম, কিন্তু ভগবান ভূতনাথ ভবানীপতির অনুচরগুলোর উপর ভারি সন্দেহ হচ্ছে। শুনেছি নন্দী ও ভুঙ্গী অনেক বিষয়ে আমাকেও জেতে, ফিরে এসে হয়তো এই ভূতটিকে পছন্দ না হতেও পারে! অক্ষয়ের পরিহাসের মধ্যে একটু যে অভিমানের জ্বালা ছিল, সেটুকু পুরবালা অনেকক্ষণ বুঝিয়াছে। তাহা ছাড়া, প্ৰথমে কাশী যাইবার প্রস্তাবে তাহার যে উৎসাহ হইয়াছিল, যাত্রার সময় যতই নিকটবর্তী হইতে লাগিল ততই তাহা স্নান হইয়া আসিতেছে। সে কহিল, “আমি কাশী যাব না।” অক্ষয়। সে কী কথা! ভূতভাবনের যে ভূত্যগুলি একবার মরে ভূত হয়েছে তারা যে দ্বিতীয় বার মারবে । রাসিকের প্রবেশ পুরবালা। আজ যে রসিকদাদার মুখ ভারি প্রফুল্ল দেখাচ্ছে ? রসিক। ভাই, তোর রসিকদাদার মুখের ঐ রোগটা কিছুতেই ঘুচল না। কথা নেই বার্তা নেই প্ৰফুল্ল হয়েই আছে— বিবাহিত লোকেরা দেখে মনে মনে রাগ করে। পুরবালা। শুনলে তো, বিবাহিত লোক ! এর একটা উপযুক্ত জবাব দিয়ে যাও। অক্ষয়। আমাদের প্রফুল্লতার খবর ও বৃদ্ধ কোথা থেকে জানবে ? সে এত রহস্যময় যে, তা উদ্ভেদ করতে আজ পর্যন্ত কেউ পারলে না— সে এত গভীর যে আমরাই হাতড়ে খুঁজে পাই নে, হঠাৎ সন্দেহ হয় আছে কি না। পুরবালা “এই বুঝি !” বলিয়া রাগ করিয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। অক্ষয় তাহাকে ধরিয়া ফিরাইয়া কহিল, “ দোহাই তোমার, এই লোকটির সামনে রাগারগি কোরো না— তা হলে ওর আস্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে।— দেখো দাম্পত্যতত্ত্বানভিজ্ঞ বৃদ্ধ, আমরা যখন রাগ করি। তখন স্বভাবত আমাদের কণ্ঠস্বর প্রবল হয়ে ওঠে, সেইটেই তোমাদের কর্ণগোচর হয় ; আর অনুরাগে যখন আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, ক্যানের কাছে মুখ আনতে গিয়ে মুখ বারংবার লক্ষ্যভ্ৰষ্ট হয়ে পড়তে থাকে, তখন তো খবর পাও না !” পুরবালা। আঃ— চুপ করো। অক্ষয় । যখন গয়নার ফর্দ হয় তখন বাড়ির সরকার থেকে সেকরা পর্যন্ত সেটা কারও অবিদিত থাকে না, কিন্তু বসন্তনিশীথে যখন প্ৰেয়সী