পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 8 と রবীন্দ্র-রচনাবলী পুরবালা ! কী হচ্ছে তোমাদের ? নীরবালা। মুখুজ্যোমশায়ের কাছে পড়া বলে নিতে এসেছি দিদি। তা উনি বলছেন, ওঁর বাইরের ঘরটা ভালো করে ঝেড়ে সাজিয়ে না দিলে উনি পড়াবেন না। তাই সেজদিদিতে আমাতে ওঁর ঘর সাজাতে যাচ্ছি। আয় ভাই । নৃপবালা। তোর ইচ্ছে হয়েছে তুই ঘর সাজাতে যা-না— আমি যাব না। নীরবালা। বাঃ, আমি একা খেটে মরব। আর তুমি সুদ্ধ তার ফল পাবে, সে হবে না। নৃপকে গ্রেফতার করিয়া লইয়া নীর চলিয়া গেল। পুরবালা | সব গুছিয়ে নিয়েছি। এখনো ট্রেন যাবার দেরি আছে বোধ হয়। অক্ষয় । যদি মিস করতে চাও তা হলে ঢের দেরি আছে। পুরবালা ! তা হলে চলো, আমাকে স্টেশনে পৌছে দেবে। চললুম রসিকদাদা— তুমি এখানে রইলে, এই শিশুগুলিকে একটু সামলে রেখে | [ প্ৰণাম রসিক। কিছু ভেবো না দিদি, এরা সকলে আমাকে যেরকম বিপরীত ভয় করে, টু শব্দটি করতে পারবে না | শৈল। দিদি ভাই, তুমি একটু থামো। আমি এই কাপড়টা ছেড়ে এসে তোমাকে প্ৰণাম করছি। পুরবালা । কেন ? ছাড়তে মন গেল যে ? শৈল। না ভাই, এ কাপড়ে নিজেকে আর-একজন বলে মনে হয়, তোদের গায়ে হাত দিতে ইচ্ছে হয় না ! রসিকদাদা, এই নাও, আমার গোফটা সাবধানে রেখে দাও, হারিয়ো না । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ শ্ৰীশ তাহার বাসায় দক্ষিণের বারান্দায় একখানা বড়োহাতাওয়ালা কেদারার দুই হাতার উপর দুই পা তুলিয়া দিয়া শুক্লসন্ধ্যায় চুপচাপ বসিয়া সিগারেট ফুকিতেছিল। পাশে টিপায়ের উপর রেকবিতে একটি গ্লাস বরফ-দেওয়া লেমনেড ও স্তুপাকার কুন্দযুকূলের মালা। বিপিন পশ্চাৎ হইতে প্ৰবেশ করিয়া তাহার স্বাভাবিক প্রবল গভীর কণ্ঠে ডাকিয়া উঠিল, “কী গো সন্ন্যাসীঠাকুর।” শ্ৰীশ তৎক্ষণাৎ হাতী হইতে পা নামাইয়া উঠিয়া বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। কহিল, “এখনো বুঝি ঝগড়া ভুলতে পারো নি ?” শ্ৰীশ কিছুক্ষণ আগেই ভাবিতেছিল, একবার বিপিনের ওখানে যাওয়া যাক। কিন্তু শরৎসন্ধার নিৰ্মল জ্যোৎসার দ্বারা আবিষ্ট হইয়া নড়িতে পারিতেছিল না। একটি গ্রাস বরফশীতল লেমনেড ও কুন্দযুকূলের মালা আনাইয়া জ্যোৎস্নাশুভ্ৰ আকাশে সিগারেটের ধূম-সহযোগে বিচিত্র কল্পনাকুণ্ডলী নির্মাণ করিতেছিল। শ্ৰীশ। আচ্ছা ভাই, শিশুপালক, তুমি কি সত্যি মনে কর আমি সন্ন্যাসী হতে পারি। নে ? বিপিন। কেন পারবে না ! কিন্তু অনেকগুলি তল্পিদার চেলা সঙ্গে থাকা চাই । শ্ৰীশ। তার তাৎপর্য এই যে, কেউ-বা। আমার বেলফুলের মালা গেথে দেবে, কেউ-বা বাজার থেকে লেমনেড ও বরফ ভিক্ষে করে আনবে, এই তো ? তাতে ক্ষতিটা কী ? যে সন্ন্যাসধর্মে বেলফুলের প্রতি বৈরাগ্য এবং ঠাণ্ডা লেমনেডের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায় সেটা কি খুব উচুদরের সন্ন্যাস % বিপিন। সাধারণ ভাষায় তো সন্ন্যাসধর্ম বলতে সেইরকমটাই বোঝায়। শ্ৰীশ। ঐ শোনো ! তুমি কি মনে কর, ভাষায় একটা কথার একটা বৈ অর্থ নেই? একজনের কাছে সন্ন্যাসী কথাটার যে অর্থ, আর-এক জনের কাছেও যদি ঠিক সেই অর্থই হয় তা হলে মন বলে