পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8b. রবীন্দ্র-রচনাবলী সংস্রব রাখব না । বিপিন। মাল্যচন্দন অঙ্গদকুণ্ডল সবই রাখতে চাও, কেবল ঐ একটা বিষয়ে এত বেশি দৃঢ়তা কেন ? শ্ৰীশ। ঐগুলো রাখছি বলেই দৃঢ়তা। যেজন্যে চৈতন্য র্তার অনুচরদের স্ত্রীলোকের সঙ্গ থেকে কঠিন শাসনে দূরে রেখেছিলেন। তার ধর্ম-অনুরাগ এবং সৌন্দর্যের ধর্ম, সেজন্যেই তার পক্ষে প্রলোভনের ফাদ অনেক ছিল। বিপিন। তা হলে ভয়টুকুও আছে! শ্ৰীশ। আমার নিজের জন্যে লেশমাত্র নেই। আমি আমার মনকে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্যে ব্যাপ্ত করে রেখে দিই, কোনাে একটা ফাদে আমাকে ধরে কার সাধ্য, কিন্তু তোমরা যে দিনরাত্রি ফুটবল টেনিস ক্রিকেট নিয়ে থাক— তোমরা একবার পড়লে ব্যাটবল গুলিডাণ্ডা সবসুদ্ধ ঘাড়মোড় ভেঙে পডবোঁ । বিপিন। আচ্ছা ভাই, সময় উপস্থিত হলে দেখা যাবে। শ্ৰীশ। ও কথা ভালো নয়। সময় উপস্থিত হবে না, সময় উপস্থিত হতে দেব না। সময় তো রথে চড়ে আসেন না, আমরা তাকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসি— কিন্তু তুমি যে সময়টার কথা বলছি তাকে বাহন অভাবে ফিরতেই হবে । পূর্ণর প্রবেশ উভয়ে। এসো পূৰ্ণবাবু! বিপিন তাহাকে কেদারাটা ছাড়িয়া দিয়া একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল। পূর্ণর সহিত শ্ৰীশ ও পূৰ্ণ । তোমাদের এই বারান্দায় জ্যোৎস্নাটি তো মন্দ রচনা কর নি— মাঝে মাঝে থামের ছায়া ফেলে ফেলে সাজিয়েছ ভালো । শ্ৰীশ। ছাদের উপর জ্যোৎস্না রচনা করা প্রভৃতি কতকগুলি অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা জন্মাবার পূর্ব হতেই আমার আছে। কিন্তু দেখো পূৰ্ণবাবু, ঐ দেশালাই করা-টরা ওগুলো আমার ভালো আসে না। পূর্ণ। (ফুলের মালার দিকে চাহিয়া ) সন্ন্যাসধর্মেই কি তোমার অসামান্য দখল আছে না কি ? শ্ৰীশ। সেই কথাই তো হচ্ছিল। সন্ন্যাসধর্ম তুমি কাকে বল শুনি । পূর্ণ। যে ধর্মে দর্জি ধোবা নাপিতের কোনো সহায়তা নিতে হয় না, তাঁতিকে একেবারেই অগ্রাহ্য করতে হয়, পিয়ার্স সোপের বিজ্ঞাপনের দিকে দৃকপাত করতে হয় না— শ্ৰীশ । আরো ছিঃ, সে সন্ন্যাসধর্ম তো বুড়ো হয়ে মরে গেছে, এখন ‘নবীন সন্ন্যাসী’ বলে একটা সম্প্রদায় গড়তে হবে— পূর্ণ। বিদ্যাসুন্দরের যাত্রায় যে নবীন সন্ন্যাসী আছেন তিনি মন্দ দৃষ্টান্ত নন, কিন্তু তিনি তো চিরকুমার-সভার বিধানমতে চলেন নি। শ্ৰীশ। যদি চলতেন তা হলে তিনিই ঠিক দৃষ্টান্ত হতে পারতেন। সাজে সজায় বাক্যে আচরণে সুন্দর এবং সুনিপুণ হতে হবে- - পূর্ণ। কেবল রাজকন্যার দিক থেকে দৃষ্টি নামাতে হবে, এই তো ? বিনি-সুতোর মালা গাথতে হবে, কিন্তু সে মালা পরাতে হবে কার গলায় হে ? শ্ৰীশ। স্বদেশের। কথাটা কিছু উচ্চশ্রেণীর হয়ে পড়ল। কী করব বলো, মালিনী মাসি এবং রাজকুমারী একেবারেই নিষিদ্ধ, কিন্তু ঠাট্টা নয়। পূৰ্ণবাবু— পূর্ণ। ঠাট্টার মতো মোটেই শোনাচ্ছে না, ভয়ানক কড়া, কথা একেবারে খটখাটে শুকনো। শ্ৰীশ । আমাদের চিরকুমার-সভা থেকে এমন একটি সন্ন্যাসী-সম্প্রদায় গঠন করতে হবে যারা রুচি শিক্ষা ও কর্মে সকল গৃহস্থের আদর্শ হবে। যারা সংগীত প্রভৃতি কলাবিদ্যায় অদ্বিতীয় হবে। আবার