পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ( 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী নেবেন, র্যারা সন্ন্যাসী হতে যাচ্ছেন- তারা কি একজন ব্ৰতধারিণী স্ত্রীলোককে অসংকোচে নিজের দলে গ্রহণ করতে পারবেন না ? তা যদি হয় তা হলে তারা গৃহী হয়ে ঘরে রুদ্ধ থাকুন, তাদের দ্বারা কোনো কাজ হবে না ।” চন্দ্ৰমাধববাবু চুলগুলার মধ্যে ঘন ঘন পাঁচ আঙুল চালাইয়া অত্যন্ত উষ্ক খুষ্ক করিয়া তুলিলেন। এমন সময় হঠাৎ তাহার আস্তিনের ভিতর হইতে হারানো বোতামটা মাটিতে পডিয়া গেল ; নির্মলা হাসিতে হাসিতে কুড়াইয়া লইয়া চন্দ্ৰীমাধববাবুর কামিজের গলায় লাগাইয়া দিল— চন্দ্ৰীমাধববাবু তাহার কোনো খবর লইলেন না— চুলের মধ্যে অঙ্গুলি চালনা করিতে করিতে মস্তিষ্ককুলায়ের চিন্তাগুলিকে বিব্রত করিতে লাগিলেন । চাকর আসিয়া খবর দিল, পূৰ্ণবাবু আসিয়াছেন। নির্মলা ঘর হইতে চলিয়া গেলে তিনি প্রবেশ করিলেন। কহিলেন, “চন্দ্ৰবাবু, সে কথাটা কি ভেবে দেখলেন ? আমাদের সভাটিকে স্থানান্তর করা আমার বিবেচনায় ভালো হচ্ছে না।” চন্দ্র। আজ আর-একটি কথা উঠেছে, সেটা পূৰ্ণবাবু, তোমার সঙ্গে ভালো করে আলোচনা করতে ইচ্ছা করি। আমার একটি ভাগী আছেন বোধ হয় জানো ? পূর্ণ। ( নিরীহভাবে ) আপনার তাগী ? চন্দ্র। হা, তার নাম নির্মলা। আমাদের চিরকুমার-সভার সঙ্গে তার হৃদয়ের খুব যোগ আছে। পূৰ্ণ । ( বিস্মিতভাবে ) বলেন কী ! চন্দ্র। আমার বিশ্বাস, তার অনুরাগ এবং উৎসাহ আমাদের কারও চেয়ে কম নয়। পূৰ্ণ । ( উত্তেজিতভাবে ) এ কথা শুনলে আমাদের উৎসাহ বেড়ে ওঠে। স্ত্রীলোক হয়ে তিনি—- চন্দ্র। আমিও সেই কথা ভাবছি, স্ত্রীলোকের সরল উৎসাহ পুরুষের উৎসাহে যেন নূতন প্রাণ সঞ্চার করতে পারে— আমি নিজেই সেটা আজ অনুভব করেছি। পূর্ণ। (আবেগপূর্ণভাবে ) আমিও সেটা বেশ অনুমান করতে পারি। চন্দ্ৰ। পৰ্ণবাবু, তোমারও কি ঐ মত ? পূর্ণ। কী মত বলছেন ? চন্দ্র। অর্থাৎ, যথার্থ অনুরাগী স্ত্রীলোক আমাদের কঠিন কর্তব্যের বাধা না হয়ে যথার্থ সহায় হতে 26<न्म ? পূর্ণ। ( নেপথ্যের প্রতি লক্ষ করিয়া উচ্চকণ্ঠে ) সে বিষয়ে আমার লেশমাত্ৰ সন্দেহ নেই, স্ত্রীজাতির অনুরাগ পুরুষের অনুরাগের একমাত্র সজীব নির্ভর— পুরুষের উৎসাহকে নবজাত শিশুটির মতো মানুষ করে তুলতে পারে কেবল স্ত্রীলোকের উৎসাহ । শ্ৰীশ ও বিপিনের প্রবেশ শ্ৰীশ। তা তো পারে পূর্ণবাবু, কিন্তু সেই উৎসাহের অভাবেই কি আজ সভায় যেতে বিলম্ব হচ্ছে ? পূৰ্ণ এত উচ্চস্বরে বলিয়া উঠিয়াছিল যে নবাগত দুইজনে সিঁড়ি হইতেই সকল কথা শুনিতে পাইয়াছিলেন । চন্দ্রবাবু কহিলেন, “না, না, দেরি হবার কারণ, আমার গলার বােতামটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি। (N !” . শ্ৰীশ। গলায় তো একটা বোতাম লাগানো রয়েছে দেখতে পাচ্ছি— আরো কি প্রয়োজন আছে ? যদি—বা থাকে, আর ছিদ্র পাবেন কোথা ? চন্দ্রবাবু গলায় হাত দিয়া বলিলেন, “তাই তাে!" বলিয়া ঈষৎ লজ্জিত হইয়া হাসিতে লাগিলেন। তোমরা সকলেই তো উপস্থিত আছি, এখন সেই কথাটার আলোচনা হয়ে যাওয়া ভালো, কী বল পূণবাবু ?