পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

((సి নীরবালা । আমাকে যখন দরকার হবে রণভেরী ধবনিত করলেই আমি হাজির হব। “আমি কি ডরাই সখী কুমারসভারে ? নাহি কি বল এ ভুজমৃণালে ?” জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করি।” শৈল | প্ৰস্তুত আছি। অক্ষয়। বলো দেখি যে-দুটি ডালে দাড়িয়েছিলেন সেই দুটি ডাল কাটতে চেয়েছিলেন কে ? নৃপ তাড়াতাড়ি উত্তর করিল, “আমি জানি মুখুজ্যোমশায়, কালিদাস।” অক্ষয়। না, আরো একজন বড়ো লোক। শ্ৰীঅক্ষয়কুমার মুখোপাধ্যায়। নীরবালা। ডাল দুটি কে ? অক্ষয় বামে নীরুকে টানিয়া বলিলেন “এই একটি” এবং দক্ষিণে নৃপকে টানিয়া আনিয়া কহিলেন নীরবালা। আর কুডুল বুঝি আজ আসছে ? অক্ষয়। আসছে কেন, এসেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। ঐ-যে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে । শুনিয়া দৌড়, দৌড়। শৈল পালাইবার সময় রসিকদাদাকে টানিয়া লইয়া গেল। চুড়ি-বালার ঝংকার এবং ত্ৰস্ত পদপল্লব কয়েকটির দ্রুতপতনশব্দ সম্পূর্ণ না মিলাইতেই শ্ৰীশ ও বিপিনের প্রবেশ। ঝম ঝাম ঝাম ঝােম দূর হইতে দূরে বাজিতে লাগিল। এবং ঘরের আলোড়িত বাতাসে এসেন্স ও গন্ধতৈলের মিশ্রিত মৃদু পরিমল যেন পরিত্যক্ত আসবাবগুলির মধ্যে আপনার পুরাতন আশ্রয়গুলিকে খুজিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া বেড়াইতে লাগিল। বিজ্ঞানশাস্ত্ৰে বলে শক্তির অপচয় নাই, রূপান্তর আছে। ঘর হইতে হঠাৎ তিন ভগিনীর পলায়নের বাতাসে যে একটি সুগন্ধ আন্দোলন উঠিয়াছিল সেটা কি প্রথমে কুমারযুগলের বিচিত্ৰ স্নায়ুমণ্ডলীর মধ্যে একটি নিগৃঢ় স্পন্দন ও অব্যবহিত পরেই তাঁহাদের অন্তঃকরণের দিকপ্রান্তে ক্ষণকালের জন্য একটি অনির্বচনীয় পুলকে পরিণত হয় নাই ? কিন্তু সংসারের যেখান হইতে ইতিহাস শুরু হয় তাহার অনেক পরের অধ্যায় হইতে লিখিত হইয়া থাকে- প্রথম স্পর্শ স্পন্দন আন্দোলন ও বিদ্যুৎচমকগুলি প্রকাশের অতীত । পরস্পর নমস্কারের পর অক্ষয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “পূৰ্ণবাবু এলেন না যে ?” শ্ৰীশ। চন্দ্ৰবাবুর বাসায় তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ তার শরীরটা খারাপ হয়েছে বলে আজ আর আসতে পারলেন না | অক্ষয় । ( পথের দিকে চাহিয়া ) একটু বসুন— আমি চন্দ্ৰবাবুর অপেক্ষায় দ্বারের কাছে গিয়ে দাড়াই । তিনি অন্ধ মানুষ, কোথায় যেতে কোথায় গিয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই— কাছাকাছি। এমন স্থানও আছে যেখানে কুমারসভার অধিবেশন কোনোমতেই প্রার্থনীয় নয়। বলিয়া অক্ষয় নামিয়া গেলেন । আজ চন্দ্ৰবাবুর বাসায় হঠাৎ নির্মলা আবির্ভূত হইয়া চিরকুমারদলের শান্ত মনের মধ্যে যে একটা মন্থন উৎপন্ন করিয়া দিয়াছিল তাহার অভিঘাত বোধ করি এখনো শ্ৰীশের মাথায় চলিতেছিল। দৃশ্যটি অপূর্ব, ব্যাপারটি অভাবনীয়, এবং নির্মলার কমনীয় মুখে যে-একটি দীপ্তি ও তাহার কথাগুলির মধ্যে যে-একটি আন্তরিক আবেগ ছিল তাহাতে তাহাকে বিস্মিত ও তাহার চিন্তার স্বাভাবিক গতিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিয়াছে। সে লেশমাত্ৰ প্ৰস্তুত ছিল না বলিয়া এই আকস্মিক আঘাতেই বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে। তর্কের মাঝখানে হঠাৎ এমন জায়গা হইতে এমন করিয়া এমন একটা উত্তর আসিয়া উত্তরের প্রত্যুত্তর থাকিতে পারে, কিন্তু সেই আবেগকম্পিত ললিতকণ্ঠ— সেই গৃঢ়-অশ্রু-করুণ বিশাল কৃষ্ণচক্ষুর দীপ্তিচ্ছটাির প্রত্যুত্তর কোথায় ? পুরুষের মাথায় ভালো ভালো যুক্তি থাকিতে পারে, কিন্তু যে