পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? と と রবীন্দ্র-রচনাবলী নীরবালা। কবিবর, সাধু সাধু। কিন্তু তোমার রচনায় কোনো কোনাে আধুনিক কবির ছায়া দেখতে পাই যেন! অক্ষয়। তার কারণ আমিও অত্যন্ত আধুনিক ! তোরা কি ভাবিস তোদের মুখুজ্যোমশায় কৃত্তিবাস ওঝার যমজ ভাই। ভূগোলের মাইল গুনে দিচ্ছিাস, আর ইতিহাসের তারিখ ভুল ? তা হলে আর বিদূষী শ্যালী থেকে ফল হল কী ? এত বড়ো আধুনিকটাকে তোদের প্রাচীন বলে ভ্ৰম হয় ? নীরবালা। মুখুজ্যোমশায়, শিব যখন বিবাহসভায় গিয়েছিলেন তখন তার শ্যালীরাও ঐরকম ভুল আধুনিক বলেই জানেন ! অক্ষয়। মূঢ়ে, শিবের যদি শ্যালী থাকত তা হলে কি তার ধ্যান ভঙ্গ করবার জন্যে অনঙ্গদেবের দরকার হত ! আমার সঙ্গে তার তুলনা ! নৃপবালা। আচ্ছা মুখুজ্যোমশায়, এতক্ষণ তুমি এখানে বসে বসে কী করছিলে ? অক্ষয়। তোদের গয়লাবাড়ির দুধের হিসেব লিখছিলাম। নীরবালা । ( ডেস্কের উপর হইতে অসমাপ্ত চিঠি তুলিয়া লইয়া ) এই তোমার গয়লাবাড়ির হিসেব ? হিসেবের মধ্যে ক্ষীর-নবনীর অংশটাই বেশি। অক্ষয়। ( ব্যস্তসমস্ত ) না না, ওটা নিয়ে গোল করিস নে, আহা, দিয়ে যা— নৃপবালা। নীরু ভাই, জ্বালাস নে, চিঠিখানা ওঁকে ফিরিয়ে দে, ওখানে শ্যালীর উপদ্রব সায় না।— কিন্তু মুখুজ্যোমশায়, তমি দিদিকে চিঠিতে কী বলে সম্বোধন কর বলো-না ! অক্ষয়। রোজ নূতন সম্বোধন করে থাকি— নৃপবালা। আজ কী করেছ বলে দেখি। অক্ষয়। শুনবে ? তবে সখী, শোনো। চঞ্চলচকিতচিত্তচকোরচোরচঞ্চচুম্বিতচারুচন্দ্ৰিকরুচিরুচির চিরচন্দ্ৰমা । নীরবালা। চমৎকার চাটুচাতুৰ্য্য! অক্ষয়। এর মধ্যে চৌর্যবৃত্তি নেই, চর্বিতচর্বণশূন্য। নৃপবালা । ( সবিস্ময়ে ) আচ্ছা মুখুজ্যোমশায়, রোজ রোজ তুমি এইরকম লম্বা লম্বা সম্বোধন রচনা করা ? তাই বুঝি দিদিকে চিঠি লিখতে এত দেরি হয় ? r অক্ষয়। ঐজন্যেই তো নৃপর কাছে আমার মিথ্যে কথা চলে না। ভগবান যে আমাকে সদ্য সদ্য বানিয়ে বলবার এমন অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন সেটা দেখছি খাটাতে দিলে না । ভগ্নীপতির কথা বেদবাক্য বলে বিশ্বাস করতে কোন মনুসংহিতায় লিখেছে বল দেখি ? নীরবালা। রাগ কোরো না, শান্ত হও মুখুজ্যোমশায়, শান্ত হও। সেজদিদির কথা ছেড়ে দাও, কিন্তু ভেবে দেখো, আমি তোমার আধখানা কথা সিকি পয়সাও বিশ্বাস করি নে— এতেও তুমি সাস্তুনা পাও का ? নৃপবালা। আচ্ছা মুখুজ্যোমশায়, সত্যি করে বলো, দিদির নামে তুমি কখনো কবিতা রচনা করেছি ? - অক্ষয়। এবার তিনি যখন অত্যন্ত রাগ করেছিলেন তখন তার স্তবরচনা করে গান করেছিলুম—- নৃপবালা । তার পরে ? অক্ষয়। তার পরে দেখলুম, তাতে উলটাে ফল হল, বাতাস পেয়ে যেমন আগুন বেড়ে ওঠে তেমনি হল। সেই অবধি স্তবরচনা ছেড়েই দিয়েছি। নৃপবালা। ছেড়ে দিয়ে কেবল গয়লাবাড়ির হিসেব লিখছা! কী স্তব লিখেছিলে মুখুজ্যোমশায়, আমাদের শোনাও-না ! অক্ষয়। সাহস হয় না, শেষকালে আমার উপরওয়ালার কাছে রিপোর্ট করবি ! নৃপবালা । না, আমরা দিদিকে বলে দেব না ।