পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ܓ ܐ k) “অবলাকাস্তবাবু আছেন ?” বলিয়া বিপিন ঘরে প্রবিষ্ট ও সচকিত হইয়া স্তম্ভিতভাবে দণ্ডায়মান। নীরবালা মুহূর্ত হতবুদ্ধি হইয়া, দ্রুতবেগে বহিস্ক্রান্ত। শৈল। আসুন বিপিনবাবু! বিপিন। ঠিক করে বলুন, আসব কি ? আমি আসার দরুন আপনাদের কোনোরকম লোকসান নেই ? রসিক। ঘর থেকে কিছু লোকসান না করলে লাভ হয় না বিপিনবাবু— ব্যাবসার এইরকম নিয়ম। যা গেল তা আবার দুনাে হয়ে ফিরে আসতে পারে, কী বল অবলাকান্ত ? শৈলী। রসিকদাদার রসিকতা আজকাল একটু শক্ত হয়ে আসছে! রসিক। গুড় জমে যেরকম শক্ত হয়ে আসে। কিন্তু, বিপিনবাবু কী ভাবছেন বলুন দেখি ? বিপিন। ভাবছি কী ছুতো করে বিদায় নিলে আমাকে বিদায় দিতে আপনাদের ভদ্রতায় বাধবে ୩ | শৈল। বন্ধুত্বে যদি বাধে ? বিপিন। তা হলে ছুতো খোজবার কোনো দরকারই হয় না। শৈল। তবে সেই খোজটা পরিত্যাগ করুন, ভালো হয়ে বসুন। রসিক। মুখখানা প্ৰসন্ন করুন বিপিনবাবু! আমাদের প্রতি ঈর্ষা করবেন না। আমি তো বৃদ্ধ, বলে জ্ঞানই করে না। আপনাকে দেখে যদি কোনো সুন্দরী কিশোরী ত্ৰস্তহরিণীর মতো পলায়ন করে থাকেন তা হলে মনকে এই বলে সাস্তুনা দেবেন যে, তিনি আপনাকে পুরুষ বলেই মস্ত খাতিরটা করেছেন । হায় রে হতভাগ্য রসিক, তোকে দেখে কোনো তরুণী লজাতে পলায়নও করে না ! বিপিন । রসিকবাবু আপনাকেও যে দলে টানছেন অবলাকান্তবাবু! এ কিরকম হল ? শৈল। কী জানি বিপিনবাবু, আমার এই অবলাকান্ত নামটাই মিথ্যে— কোনো অবলা তো এপর্যন্ত আমাকে কান্ত বলে বরণ করে নি । বিপিন । হতাশ হবেন না, এখনো সময় আছে। শৈল। সে আশা এবং সে সময় যদি থাকত তা হলে চিরকুমার-সভায় নাম লেখাতে যৌতুম না। বিপিন । ( স্বাগত ) এর মনের মধ্যে একটা কী বেদনা রয়েছে, নইলে এত অল্প বয়সে এই কাচামুখে এমন স্নিগ্ধ কোমল করুণভাব থাকত না।— এটা কিসের খাতা ? গান লেখা দেখছি। নীরবালা দেবী ! | 어? শৈল। কী পড়ছেন বিপিনবাবু ? বিপিন । কোনো একটি অপরিচিতার কাছে অপরাধ করছি, হয়তো তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবার সুযোগ পাব না, এবং হয়ত তার কাছে শাস্তি পাবারও সৌভাগ্য হবে না, কিন্তু এই গানগুলি মানিক এবং হাতের অক্ষরগুলি মুক্তো ! যদি লোভে পড়ে চুরি করি তবে দণ্ডদাতা বিধাতা ক্ষমা করবেন! শৈল । বিধাতা মাপ করতে পারেন, কিন্তু আমি করব না। ও খাতাটির পরে আমার লোভ আছে বিপিনবাবু ! রসিক। আর, আমি বুঝি লোভ মােহ সমস্ত জয় করে বসে আছি ? আহা, হাতের অক্ষরের মতো জিনিস আর আছে ? মনের ভাব মূর্তি ধরে আঙুলের আগা দিয়ে বেরিয়ে আসে — অক্ষরগুলির উপর চোখ বুলিয়ে গেলে, হৃদয়টি যেন চোখে এসে লাগে ! অবলাকান্ত, এ খাতাখানি ছেড়ে না ভাই ! তোমাদের চঞ্চলা নীরবালা দেবী কৌতুকের ঝরনার মতো দিনরাত ঝরে পড়ছে, তাকে তো ধরে রাখতে পার না, এই খাতাখানির পত্রপুটে তারই একটি গণ্ডুষ ভরে উঠেছে— এ জিনিসের দাম আছে! বিপিনীবাবু, আপনি তাে নীরবালাকে জানেন না, আপনি এ খাতাখানা নিয়ে কী করবেন ? বিপিন। আপনারা তো স্বয়ং তাকেই জানেন— খাতাখানিতে আপনাদের প্রয়োজন কী ? এই খাতা থেকে আমি যেটুকু পরিচয় প্রত্যাশা করি তার প্রতি আপনার দৃষ্টি দেন কেন ?