পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনার তরী বিশ্বের অবোধ বাণী । চিরকাল ধরে শিথিল হল না মুষ্টি, তবু অবিরত সেই চারি বা ৎসরের কন্যাটির মতো অক্ষুন্ন প্রেমের গর্বে কহিছে সে ডাকি * যেতে নাহি দিব” । স্নানমুখ, অশ্রু-আঁখি, দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরিব, তবু প্ৰেম কিছুতে না মানে পরাভব, তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কঠে। কয় * যেতে নাহি দিব” । যত বার পরাজয় সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে । আমার আকাঙক্ষণসম এমন আকুল, এমন সকল-বাড়া, এমন অকুল, এমন প্ৰবল,বিশ্বে কিছু আছে আর !” এত বলি দপভরে করে সে প্রচার * যেতে নাহি দিব” । তখনি দেখিতে পায়, শুষ্ক তুচ্ছ ধুলিসম উড়ে চলে যায় একটি নিশ্বাসে তার আদরের ধন ; ছিন্নমল তরুসম পড়ে পৃথ্বীতলে হত্যগর্ব নতশির । তবু প্ৰেম বলে, ‘সত্যভঙ্গ হবে না বিধির । আমি তার পেয়েছি স্বাক্ষর-দেওয়া মহা অঙ্গাকার চির-অধিকার-লিপি ।”— তাই স্ফীত বুকে সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে দাড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তনুলতা বলে, “মৃত্যু তুমি নাই ।”— হেন গৰ্ব্বকথা ! মৃত্যু হাসে বসি । মরণাপীড়িত সেই চিরজীবী, প্ৰেম আচ্ছন্ন করেছে এই অনন্ত সংসার, বিষন্ন নয়ন-’পরে অশ্রাবাস্পসম, ব্যাকুল আশঙ্কাভরে টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশা বিশ্বময় । আজি যেন পন্ডিছে নয়নেদুখানি অবোধ বাহু বিফল বাধনে স্তব্ধ সকাতর । চঞ্চল স্রোতের নীরে পড়ে আছে একখানি আচঞ্চল ছায়া অশ্রচৰ্বিবৃষ্টিভরা কোন মেঘের সে মায়া । 3 NSD