পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ (金 이 ( বিপিন। ও কে হে! পূৰ্ণ দেখছি। ও বেচারার এ গলি থেকে আর বেরোবার জো নেই। ঐ বীরপুরুষের অশ্বমেধের ঘোড়াটি বেজায় খোড়াচ্ছে। ওকে একবার ডাক দেব ? শ্ৰীশ। ডাকো। ও কিন্তু আমাদেরই দুজনকে অন্বেষণ করে গলিতে গলিতে ঘুরছে বলে বোধ 20bय की । বিপিন। পূৰ্ণবাবু, খবর কী ? পূর্ণ। অত্যন্ত পুরোনো। কাল-পরশু যে-খবর চলছিল আজও তাই চলছে। শ্ৰীশ। কাল-পরশু শীতের হাওয়া বচ্ছিল, আজ বসন্তের হাওয়া দিয়েছে—— এতে দুটো-একটা নতুন খবরের আশা করা যেতে পারে। পূর্ণ। দক্ষিণের হাওয়ায় যে-সব খবরের সৃষ্টি হয়, কুমারসভার খবরের কাগজে তার স্থান নেই। তপোবনে একদিন অকালে বসন্তের হাওয়া দিয়েছিল, তাই নিয়ে কালিদাসের কুমারসম্ভব কাব্য রচনা হয়েছে— আমাদের কপালগণে বসন্তের হাওয়ায় কুমার-অসম্ভব কাব্য হয়ে দাড়ায়। বিপিন। হয় তো হােক-না পূৰ্ণবাবু— সে কাব্যে যে দেবতা দগ্ধ হয়েছিলেন এ কাব্যে তাকে পুনজীবন দেওয়া যাক। পূর্ণ। এ কাব্যে চিরকুমার-সভা দগ্ধ হােক। যে দেবতা জ্বলেছিলেন তিনি জ্বালান। না, আমি ঠাট্টা করছি নে, শ্ৰীশবাবু, আমাদের চিরকুমার-সভাটি একটি আস্ত জতুগৃহবিশেষ। আগুন লাগলে রক্ষে নেই। তার চেয়ে বিবাহিত-সভা স্থাপন করো, স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে নিরাপদ থাকবে । যে ইট পাজায় পুড়েছে তা দিয়ে ঘর তৈরি করলে আর পোড়বার ভয় থাকে না হে । শ্ৰীশ। যে-সে লোক বিবাহ করে করে বিবাহ জিনিসটা মাটি হয়ে গেছে পূৰ্ণবাবু! সেইজন্যেই তো কুমারসভা। আমার যতদিন প্ৰাণ আছে ততদিন এ সভায় প্রজাপতির প্রবেশ নিষেধ । বিপিন । পঞ্চশর ? শ্ৰীশ। আসুন তিনি। একবার তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেলে, বাস, আর ভয় নেই। পূর্ণ। দেখো শ্ৰীশবাবু! 最 শ্ৰীশ। দেখব। আর কী ? তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এক চােট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলব, কবিতা আওড়ােব, নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ জ্বালাইয়া যাও প্ৰিয়া, তোমার অনল দিয়া | কবে যাবে তুমি সমুখের পথে দীপ্ত শিখাটি বাহি আছি তাই পথ চাহি । আপন আঁধার নিয়া | নিশি না পোহাতে জীবনপ্ৰদীপ৷ জ্বালাইয়া যাও প্ৰিয়া ! পূর্ণ। ওহে শ্ৰীশবাবু, তোমার কবিটি তো মন্দ লেখে নি!— নিশি না পোহাতে জীবনপ্ৰদীপ৷ জ্বালাইয়া যাও প্ৰিয়া ! ঘরটি সাজানো রয়েছে— থালায় মালা, পালঙ্কে পুষ্পশয্যা, কেবল জীবনপ্রদীপটি জুলছে না, সন্ধ্যা ক্রমে রাত্রি হতে চলল! — বাঃ দিব্যি লিখেছে! কোন বইটাতে আছে বলো দেখি ? শ্ৰীশ । বইটার নাম আবাহন।