পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(b. O রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বিপিন। বটে বটে, তাকে বলে আসতে ভুলে গিয়েছিলেম— একবার তার সঙ্গে দেখা করে আসি (?i | রসিক। ( জনাস্তিকে ) পুনর্বার কিছু সংগ্রহের চেষ্টায় আছেন বুঝি ? মানবধর্মটা ক্রমেই আপনাকে চেপে ধরছে ! ۔۔۔۔ [বিপিনের প্রস্থান শ্ৰীশ। রসিকবাবু, আপনার কাছে আমার একটা পরামর্শ আছে। রসিক। পরামর্শ দেবার উপযুক্ত' বয়স হয়েছে, বুদ্ধি না হতেও পারে। শ্ৰীশ। আপনাদের ওখানে সেদিন যে দুটি মহিলাকে দেখেছিলেম, তাদের দুজনকেই আমার সুন্দরী বলে বোধ হল। রসিক। আপনার বোধশক্তির দোষ দেওয়া যায় না। সকলেই তো ঐ এক কথাই বলে। শ্ৰীশ । তাদের সম্বন্ধে যদি মাঝে মাঝে আপনার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি তা হলে কিরসিক। তা হলে আমি খুশি হব, আপনারও সেটা ভালো লাগতে পারে এবং তাদেরও বিশেষ ক্ষতি হবে না। শ্ৰীশ। কিছুমাত্র না। ঝিল্লি যদি নক্ষত্র সম্বন্ধে জল্পনা করে— রসিক । তাতে নক্ষত্রের নিদ্রার ব্যাঘাত হয় না। শ্ৰীশ । ঝিল্লিরই অনিদ্রারোগ জন্মাতে পারে, কিন্তু তাতে আমার আপত্তি নেই। রাসিক । আজ তো তাই বোধ হচ্ছে। শ্ৰীশ। র্যার রুমাল কুড়িয়ে পেযেছিলুম তার নামটি বলতে হবে। শ্ৰীশ। তিনি কােনটি? রসিক। আপনিই আন্দাজ করে বলুন দেখি । শ্ৰীশ। র্যার সেই লাল রঙের রেশমের শাড়ি পরা ছিল ? রসিক | বলে যান। শ্ৰীশ । যিনি লজায় পালাতে চাচ্ছিলেন, অথচ পালাতেও লজা বোধ করছিলেন— তাই মুহূর্তকালের মতো হঠাৎ ত্ৰস্তহরিণীর মতো থমকে দাড়িয়েছিলেন, সামনের দুই-এক গুচ্ছ চুল প্ৰায় চোখের উপরে এসে পড়েছিল— চাবির-গোছা-বাধা চু্যত অঞ্চলটি বা হাতে তুলে ধরে যখন দ্রুতবেগে চলে গেলেন তখন তার পিঠ-ভরা কালো চুল আমার দৃষ্টিপথের উপর দিয়ে একটি কালো জ্যোতিষ্কের মতো ছুটে নৃত্য করে চলে গেল। রসিক। এ তো নৃপবালাই বটে ! পা দুখানি লজ্জিত, হাত দুখানি কুষ্ঠিত, চোখ দুটি ত্ৰস্ত, চুলগুলি কুঞ্চিত, দুঃখের বিষয় হৃদয়টি দেখতে পান নি— সে যেন ফুলের ভিতরকার লুকোনো মধুঢ়কুর মতো মধুর, শিশিরটুিকুর মতো করুণ। শ্ৰীশ। রসিকবাবু, আপনার মধ্যে এত যে কবিত্বরস সঞ্চিত হয়ে রয়েছে তার উৎস কোথায় এবার টের পেয়েছি। রসিক। ধরা পড়েছি। শ্ৰীশবাবু— কবীন্দ্ৰাণাং চেতঃকমলবনমালাতপরুচিং ভজন্তে যে সন্তঃ কতিচিদরুণামেব ভবতাং বিরিঞ্চিপ্ৰেয়স্যাস্তারুণতরাশঙ্গারলহরীং গভীরাভিৰ্ব্বাগভির্বিদধ্যাতি সভারঞ্জনময়ীম। কবীন্দ্রদের চিত্তকমলবনমালার কিরণলেখা যে তুমি, তোমাকে যারা লেশমাত্ৰ ভজনা করে তারাই গভীর বাক্য-দ্বারা সরস্বতীর সভারঞ্জনাময়ী তরুণলীলালহরী প্ৰকাশ করতে পারে। আমি সেই কবিচিত্তকমলবনের কিরণলেখাটির পরিচয় পেয়েছি।