পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ケど রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নির্মলা । আমার মামার কাছে দেশের কাজ এবং নিজের কাজ একই। আমি যদি আপনাদের শৈল। আপনি যে সৌভাগ্যক্রমে চন্দ্ৰবাবুকে ভালো করে জানিবার যোগ্যতা লাভ করেছেন এতে আপনি ধন্য । নির্মলা । আমি ওঁকে জানিব না তো কে জানবে ? শৈল। আত্মীয় সব সময় আত্মীয়কে জানে না। আত্মীয়তায় ছোটোকে বড়ো করে তোলে বটে, তেমনি বড়োকেও ছোটাে করে আনে। চন্দ্ৰবাবুকে যে আপনি যথার্থভাবে জেনেছেন তাতে আপনার ক্ষমতা প্ৰকাশ পায় । নির্মলা। কিন্তু আমার মামাকে যথার্থভাবে জানা খুব সহজ । ওঁর মধ্যে এমন একটি স্বচ্ছতা আছে ! শৈলী। দেখুন, সেইজন্যেই তো ওঁকে ঠিকমত জানা শক্ত। দুৰ্যোধন স্ফটিকের দেয়ালকে দেয়াল বলে দেখতেই পান নি। সরল স্বচ্ছতার মহত্ত্ব কি সকলে বুঝতে পারে ? তাকে অবহেলা করে। আড়ম্বরেই লোকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। নির্মলা। আপনি ঠিক কথা বলেছেন। বাইরের লোকে আমার মামাকে কেউ চেনেই না । বাইরের লোকের মধ্যে এতদিন পরে আপনার কাছে মামার কথা শুনে আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে সে কী বলব । শৈল। আপনার ভক্তিও আমাকে ঠিক সেইরকম আনন্দ দিচ্ছে। চন্দ্র। ( উভয়ের নিকটে আসিয়া ) অবলাকান্তবাবু, তোমাকে যে বইটি দিয়েছিলেম সেটা পড়েছ ? শৈলী। পড়েছি এবং তার থেকে সমস্ত নোট করে আপনার ব্যবহারের জন্য প্ৰস্তুত করে রেখেছি। চন্দ্র। আমার ভারি উপকার হবে, আমি বড়ো খুশি হলুম অবলাকান্তবাবু! পূর্ণ নিজে আমার কাছে ঐ বইটি চেয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওঁর শরীর ভালো ছিল না বলে কিছুই করে উঠতে পারেন নি। খাতাটি তোমার কাছে আছে ? শৈল | এনে দিচ্ছি। [প্ৰস্থান রসিক। পূৰ্ণবাবু, আপনাকে কেমন স্নান দেখছি, অসুখ করেছে কি ? পূর্ণ। না, কিছুই না। রসিকবাবু, যিনি গেলেন এরই নাম অবলাকান্ত ? রসিক । হা । পূর্ণ। আমার কাছে ওঁর ব্যবহারটা তেমন ভালো ঠেকছে না। রসিক । অল্প বয়স কিনা সেইজন্যে— পূর্ণ। মহিলাদের সঙ্গে কিরকম আচরণ করা উচিত সে শিক্ষা ওঁর বিশেষ দরকার। রসিক। আমিও সেটা লক্ষ্য করে দেখেছি, মেয়েদের সঙ্গে উনি ঠিক পুরুষোচিত ব্যবহার করতে জানেন না— কেমন যেন গায়ে-পড়া ভাব । ওটা হয়তো অল্প বয়সের ধর্ম। পূর্ণ। আমাদেরও তো বয়স খুব প্রাচীন হয় নি, কিন্তু আমরা তো— রসিক। তা তো দেখছি, আপনি খুব দূরে দূরেই থাকেন, কিন্তু উনি হয়তো সেটাকে ঠিক ভদ্রতা বলেই গ্ৰহণ করেন না। ওঁর হয়তো ভ্ৰম হচ্ছে আপনি ওঁকে অগ্রাহ্য করেন। পূর্ণ। বলেন কী রসিকবাবু ? কী করব বলুন তো। আমি তো ভেবেই পাই নে কী কথা বলবার জন্যে আমি ওঁর কাছে অগ্রসর হতে পারি। রসিক। ভাবতে গেলে ভেবে পাবেন না। না ভেবে অগ্রসর হবেন, তার পরে কথা। আপনি বেরিয়ে যাবে। পূর্ণ। না রসিকবাবু, আমার একটা কথাও বেরোয় না। কী বলব। আপনিই বলুন-না। রসিক। এমন কোনো কথাই বলবেন না যাতে জগতে যুগান্তর উপস্থিত হবে। গিয়ে বলুন, আজকাল হঠাৎ কিরকম গরম পড়েছে।