পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ GSS আমরা সব দাড়ীর দলে বসে গেছি। নির্মলা। আপনাকেও কর্মে এবং ভাবে এদের সকলের থেকে পৃথক বোধ হয়। একদিন মাত্র দেখেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে, এ সভার মধ্যে আপনিই আমার প্রধান সহায় হবেন। শৈল। সে তো আমার সৌভাগ্য। এই-যে আসুন পূৰ্ণবাবু! আমরা আপনার কথাই বলছিলেম। বসুন। শ্ৰীশ। অবলাকাস্তবাবু, আসুন, আপনার সঙ্গে অনেক কথা বলবার আছে। ( জনান্তিকে লইয়া ) আজ সভার পুরাতন সভ্য তিনটিকে আপনারা দুজনে লজ্জা দিয়েছেন। তা, ঠিক হয়েছে— পুরাতনের মধ্যে প্রাণসঞ্চার করবার জন্যেই নূতনের প্রয়োজন। শৈল। আবার নূতন চালা কাঠে আগুন জ্বালাবার জন্যে পুরাতন ধরা-কাঠের দরকার। শ্ৰীশ । আচ্ছা, সে বিচার পরে হবে। কিন্তু আমার সেই রুমালটি ? সেটি হরণ করে আমার পরকাল খুইয়েছি, আবার রুমালটিও খোওয়াতে পারি নে। ( পকেট হইতে বাহির করিয়া ) এই আমি এক ডজন রেশমের রুমাল এনেছি, এই বদল করে নিতে হবে। এ যে তার উচিত মূল্য তা বলতে পারি নে—— তার উপযুক্ত মূল্য দিতে গেলে চীন-জাপান উজাড় করে দিতে হয়। শৈলী। মশায়, এ ছলনাটুকু বোঝবার মতো বুদ্ধি বিধাতা আমাকে দিয়েছেন। এ উপহার আমার জন্যে আসেও নি, র্যার রুমাল হরণ করেছেন আমাকে উপলক্ষ করে এগুলি— শ্ৰীশ। অবলাকান্তবাবু, ভগবান বুদ্ধি আপনাকে যথেষ্ট দিয়েছেন দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু দয়ার ভাগটা কিছু যেন কম বোধ হচ্ছে— হতভাগ্যকে রুমালটি ফিরিয়ে দিলেই সেই কলঙ্কটুকু একেবারে দূর হয়। শৈল। আচ্ছা, আমি দয়ার পরিচয় দিচ্ছি, কিন্তু আপনি সভার জন্যে যে প্রবন্ধ লিখতে প্রতিশ্রুত সেটা লিখে দেওয়া চাই । শ্ৰীশ। নিশ্চয় দেব-— রুমালটা ফিরে দিলেই কাজে মন দিতে পারব, তখন অন্য সন্ধান ছেড়ে কেবল সত্যানুসন্ধান করতে থাকব। ঘরের অন্যত্র বিপিন। বুঝেছেন রসিকবাবু, আমি তার গানের নির্বাচন চাতুরী দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। গান যে তৈরি করেছে তার কবিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু এই গানের নির্বাচনে যে কবিত্ব প্ৰকাশ পেয়েছে তার মধ্যে ভারি একটি সৌকুমাৰ্য আছে। রসিক। ঠিক বলেছেন— নির্বাচনের ক্ষমতাই ক্ষমতা। লতায় ফুল তো আপনি ফোটে, কিন্তু যে লোক মালা গাথে নৈপুণ্য এবং সুরুচি তো তারই। বিপিন। আপনার ও গানটা মনে আছে ?— তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায় কোন পাথরে কোন পাষাণের ঘায়। নবীন তরী নতুন চলে, দিই নি পাড়ি অগাধ জলে, বাহি তারে খেলার ছলে কিনার-কিনারায়। তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়। এক ছিলেম কৰ্ণ ধ’রে— লেগেছিল পালের পরে মধুর মৃদু বায়। সুখে ছিলেম। আপন মনে, মেঘ ছিল না। গগনকোণে— লাগবে তরী কুসুমবনে ছিলেম সে আশায়। তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়।