পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ (; Հ Գ তা হলে আমার উপযুক্ততা সম্বন্ধে আপনার ভয়ানক সন্দেহ হবে। বনমালী। তা হলে আমি উঠি, আপনি ব্যস্ত আছেন, আর-এক সময় আসব। বিপিন। (তানপুরা তুলিয়া লইয়া ) সারেগা রেগামা গামাপা— [প্ৰস্থান শ্ৰীশের প্রবেশ শ্ৰীশ। কী হে বিপিন— এ কী ? কুস্তি ছেড়ে দিয়ে গান ধরেছ ? বিপিন। ( শিক্ষকের প্রতি) ওস্তাদজি, আজ ছুটি। কাল বিকেলে এসো। [ ওস্তাদের প্রস্থান কী করব বলো, গান না শিখলে তো আর তোমার সন্ন্যাসীদলে আমল পাওয়া যাবে না। শ্ৰীশ। আচ্ছা, তুমি যে সারেগামা সাধতে বসেছ, কুমারসভার সেই লেখাটায় হাত দিতে পেরেছ ? বিপিন। না ভাই, সেটাতে এখনো হাত দিতে পারি নি। তোমার লেখাটি হয়ে গেছে নাকি ? শ্ৰীশ। না, আমিও হাত দিই নি। ( কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ) না ভাই, ভারি অন্যায় হচ্ছে। ক্ৰমেই আমরা আমাদের সংকল্প থেকে যেন দূরে চলে যাচ্ছি। বিপিন। অনেক সংকল্প ব্যাঙাচির লেজের মতো, পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে আপনি অন্তর্ধান করে। কিন্তু যদি লেজটুকুই থেকে যেত, আর ব্যাঙটা যেত শুকিয়ে, সে কিরকম হত ? এক সময়ে একটা ংকল্প করেছিলেম বলেই যে সেই সংকল্পের খাতিরে নিজেকে শুকিয়ে মারতে হবে, আমি তো তার মানে বুঝি নে। শ্ৰীশ। আমি বুঝি। অনেক সংকল্প আছে যার কাছে নিজেকে শুকিয়ে মারাও শ্রেয়। অফলা গাছের মতো আমাদের ডালে-পালায় প্রতিদিন যেন অতিরিক্ত পরিমাণ রসসঞ্চার হচ্ছে এবং সফলতার আশা প্রতিদিন যেন দূর হয়ে যাচ্ছে। আমি ভুল করেছিলুম ভাই বিপিন! সব বড়ো কাজেই তপস্যা চাই ; নিজেকে নানা ভোগ থেকে বঞ্চিত না করলে, নানা দিক থেকে প্ৰত্যাহার করে না আনতে পারলে, চিত্তকে কোনো মহৎ কাজে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করা যায় না। এবার থেকে রাসচর্চা একেবারে পরিত্যাগ করে কঠিন কাজে হাত দেব, এইরকম প্ৰতিজ্ঞা করেছি। বিপিন। তোমার কথা মানি। কিন্তু সব তৃণেই তো ধান ফলে না ; শুকোতে গেলে কেবল নাহিক শুকিয়ে মরাই হবে, ফল ফলবে না। কিছুদিন থেকে আমার মনে হচ্ছে আমরা যে সংকল্প গ্ৰহণ করেছি সে সংকল্প আমাদের দ্বারা সফল হবে না, অতএব আমাদের স্বভাবসাধ্য অন্য কোনোরকম পথ অবলম্বন করাই শ্রেয় । শ্ৰীশ। এ কোনো কাজের কথা নয়। বিপিন, তোমার তত্ত্বরা ফেলো— বিপিন। আচ্ছা, ফেললুম, তাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না। শ্ৰীশ । চন্দ্ৰবাবুর বাসায় আমাদের সভা তুলে নিয়ে যাওয়া যাক— বিপিন। উত্তম কথা । শ্ৰীশ । আমরা দুজনে মিলে রসিকবাবুকে একটু সংযত করে রাখব। বিপিন। তিনি একলা আমাদের দুজনকে অসংযত করে না তোলেন। ভূত্য। একটি বুড়ো বাবু এসেছেন। বিপিন। বুড়ো বাবু ? জ্বালালে দেখছি। বনমালী আবার এসেছে। শ্ৰীশ। বনমালী ? সে যে এই খানিকক্ষণ হল আমার কাছেও এসেছিল। বিপিন। ওরে, বুড়োকে বিদায় করে দে। শ্ৰীশ। তুমি বিদায় করলে আবার আমার ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়বে। তার চেয়ে ডেকে আনুক, আমরা দুজনে মিলে বিদায় করে দিই। ( ভূত্যের প্রতি ) বুড়োকে নিয়ে আয়।